অবশেষে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল ৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার সকালে রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে চসিক মেয়রের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সিটি মেয়রকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। দৈনিক পূর্বদেশের পক্ষ থেকে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে অভিনন্দন জানাই। চট্টগ্রামে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে ডা. শাহাদাতের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। অতীতে তিনি দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। ব্যক্তিগতভাবে সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে ডা. শাহাদাতের যে খ্যাতি রয়েছে, দেশের দ্বিতীয় প্রধান শহর, বন্দর ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবেও তিনি সেই সুনাম ও খ্যাতির সুবাস নগরজুড়ে আরো ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি করতে সক্ষম হবেন বলে আমাদো বিশ্বাস। শপথের পর গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে তিনি চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চট্টগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরে যে বক্তব্য দিয়েছেন একইসাথে চট্টগ্রামের সকল সমস্যাকে একজায়গায় এনে সমাধানের যে কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন তা এককথায় অনন্য, সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত। তাঁর এ বক্তব্য চট্টগ্রামবাসীকে আশাবাদী করবে নিঃসন্দেহে। শপথের পর উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ( চসিক) মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ডা. শাহাদাত হোসেন বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশের একটি প্রধান নগরীর মেয়র হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন, এটাই তার কাছে প্রত্যাশা করি। আমরা গ্রিন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে চাই। ক্লিন সিটি হিসেবে নগরবাসীরও একই প্রত্যাশা। তিনি আরও বলেন, পেছনের সব ধ্যান-ধারণা, চিন্তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকদের যে অর্জনের জন্য তাদের আত্মত্যাগ রয়েছে, সে প্রত্যাশা পূরণের জন্য বৈষম্যহীন শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় মেয়র শাহাদাত হোসেনের কাছে দেখতে চাই। আমি মনে করি, এ প্রত্যাশা চট্টগ্রামের প্রতিটি নাগরিকের। আমাদের প্রত্যাশা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের। উপদেষ্টার বক্তব্যেও পরই মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে’। যদি চট্টগ্রাম শহরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করা যায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি- এসব আমার নির্বাচনী ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব। একই সাথে তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’র মাধ্যমে চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোর দিয়ে বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নগরীর সকল সমস্যা সমাধানে সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিএমপি, ট্রাফিক পুলিশসহ অন্যান্য সব সেবামূলক কর্তৃপক্ষগুলোর সাথে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। পর্যটন নগর হিসেবে চট্টগ্রামকে অনন্য শোভায় সাজানো হবে বলের তিনি সাংবাদিকদের কাছে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানান। তবে এ জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। আমরা মনে করি, মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন যে পরিকল্পনা ও প্রত্যাশার কথা জানান তা যথার্থ। ডা. শাহাদাত হোসেন তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে সফল হবেন-এমন প্রত্যাশা নগরবাসী। উল্লেখ্য, বিজ্ঞ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও যুগ্ম জেলা জজ, ১ম আদালত চট্টগ্রাম কর্তৃক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি মনোনীত ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বিজ্ঞ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বাংলাদেশ গেজেটে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে সংশোধিত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সরকারি গেজেট প্রকাশিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সরকার বা তৎকর্তৃক মনোনীত কর্তৃপক্ষ তাদের শপথ গ্রহণের বিধান রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সানুগ্রহ সম্মতিতে গতকাল ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।