নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল গড়ে তুলে বিশেষজ্ঞসহ প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে স্বল্পমূল্যে ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
গতকাল বুধবার মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল পরিদর্শনকালে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনারও ঘোষণা দেন তিনি। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মেয়র বলেন, মেমন মাতৃসদন হাসপাতালে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেল গড়ে তোলা হবে। বিশেষজ্ঞসহ প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে স্বল্প মূল্যে ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। এছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট পরিদর্শন করবো আমি। ইতোমধ্যে আলকরণের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছি। পরিচ্ছন্ন বা স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে আমাকে জানাবেন, আমি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিব। মশা মারতে এখন যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো আমি যাচাই করবো, তা কাজ করছে কিনা। প্রয়োজনে মশা নিয়ন্ত্রণে নতুন ওষুধ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
তিনি বলেন, একসময় নারী ও নবজাতক শিশুদের সেবায় মেমন হাসপাতালের আলাদা সুনাম ছিল। এখানে এসে চিকিৎসক ও রোগীদের সাথে কথা বলে বুঝলাম হাসপাতালে যন্ত্রপাতির ঘাটতি আছে। যন্ত্রপাতিগুলো সংগ্রহ করে এবং প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে মেমন হাসপাতালকে ঢেলে সাজানো হবে। বন্দরটিলা হাসপাতাল, মোস্তফা হাকিম হাসপাতালসহ কর্পোরেশনের বেশকিছু ভালো হাসপাতাল রয়েছে, এগুলো সংস্কার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা হবে।
নিজের চিকিৎসা জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে খ্যাতনামা এ চিকিৎসক বলেন, আমি ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলাম। রুগ্ন এ হাসপাতালটিকে দায়িত্ব ছাড়ার সময় একটি ছয় তলা হাসপাতাল ভবনসহ সাড়ে তিন কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রেখে এসেছি। কখনও কোন ডক্টর, কোন নার্স বা স্টাফ বলতে পারেনি যে তাদের বেতন বকেয়া ছিল। ইনশাল্লাহ আমার আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার বাস্তবায়ন করব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, ডা. মুনিরুল ইসলাম রুবেল, ডা. হোসনে আরা বেগম, ডা. শাহনাজ আক্তার, ডা. মো. রেজাউল করিম, ডা. মো. মিজানুর রহমান, ডা. বাবলী মল্লিক, ডা. পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, ডা. ঢালিয়া ভট্টাচার্য্য, ডা. সামন্ত মহুরী, ডা. নিবেদিতা পাল, ডা. পলাশ দাশ, প্রকৌশলী ইকবাল হোসেনসহ চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
রাতে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম করার নির্দেশ :
জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে সড়কে ঝাড়ু দেওয়াসহ পরিচ্ছন্ন বিভাগের যে সমস্ত কাজ রাতে করা সম্ভব, সেগুলো রাতেই শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
গতকাল বুধবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের সাথে মতবিনিময়কালে এ নির্দেশ দেন তিনি । তিনি বলেন, দিনের বেলা পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চললে ধুলোবালি উড়ে, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ ছড়ায় এতে নাগরিকরা কষ্ট পায় এবং বাতাসে ওড়া ধুলা-বালি এলার্জি, ফুসফুসজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এজন্য সড়ক ঝাড়ু দেওয়াসহ যে সমস্ত কাজ রাতে করা সম্ভব সেগুলো রাতেই করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি রবিবার থেকে প্রতিদিন দুটি করে ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কার্যক্রম পরিদর্শন করবো। কোন কর্মকর্তা কর্মচারীকে কর্মস্থলে পাওয়া না গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজ না করলে চাকরি থাকবে না। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি আমার মূল ইশতেহার ছিল। আমি এগুলো বাস্তবায়ন করবো।
নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে জনগণের সহযোগিতা কামনা করে মেয়র বলেন, নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হলে নাগরিকদেরও সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলে যথাস্থানে ময়লা ফেলতে হবে। বন্ধ করতে হবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার। নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রাথমিকভাবে আমরা নাগরিকদের সচেতন করব, পরবর্তীতে প্রয়োজনে জরিমানা করব।
এ সময় মেয়র পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নগরীকে কীভাবে আরো পরিচ্ছন্ন রাখা যায় এবং মশা কমানো যায় সে ব্যাপারে মতবিনিময় করেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অং সুই প্রু মারমা, সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম, বিশিষ্ট ডেন্টাল সার্জন ডা. এস এম সরোয়ার আলম, ডা. তপন চক্রবর্তী, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন রিফাতসহ পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।