মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন মাদ্রাসাছাত্র সাইফুল

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেনী থেকে চট্টগ্রাম শহরে চাচার বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম আরিফ। চাচার বাসা থেকে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন সাইফুল। আন্দোলন চলাকালীন নগরীর সিআরবি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সারাদিন খোঁজাখুঁজির পর রাত আটটায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাইফুলের খোঁজ পান তার চাচা আবুল কাশেম। এরপর থেকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন সাইফুল। গত ৮ সেপ্টেম্বর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবশেষে মৃত্যুর হার মানলেন ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সাইফুল। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয়।
সাইফুলের ফুফাতো ভাই মোহাম্মদ মনির জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের সিআরবিতে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয় সাইফুল। ওইদিন স্বৈরাচারী সরকারের কর্মীদের হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। বিক্ষোভ দমনকারীরা হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে সাইফুলের মাথা ফেটে যায়। সাইফুলকে ওইদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ৮ সেপ্টেম্বর তাকে ঢাকার সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়। সাইফুল শিক্ষার্থী হিসেবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলো। সে পরিবারের বড় ছেলে। তার তিনটি ছোট বোন রয়েছে। সাইফুলের বাবা আলতাফ হোসেন একজন কৃষক। সাইফুলের মা মানসিক রোগী।
সাইফুলের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘সিআরবি এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সেদিন রাত ৮টায় আমরা খবর পাই। রাতেই ফেনী থেকে আমরা হাসপাতালে ছুটে আসি। সেদিন থেকেই তাকে আইসিইউতে ছিল। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এনেও ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার ছেলের কাতার চলে যাওয়ার কথা ছিলো। ভিসাও চলে এসেছিলো। এইজন্য আমরা ৫০ হাজার টাকাও জমা দিয়েছিলাম। আমি কৃষিকাজ করে সংসার চাই। সাইফুল আমার একমাত্র ছেলে। সাইফুল বলতো বিদেশ যাওয়ার পর আমার আর কোন কষ্ট করতে হবে না। ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনার অপেক্ষায় ছিলাম। এ কারণে হাসপাতালের বারান্দা ছেড়ে কোথাও যেতাম না। আমার ছেলেকে আর ফিরে পেলাম না।’
সাইফুল ফেনীর দাগনভ‚ঞা উপজেলার দরবেশহাট ফাজিল মাদ্রাসার দাখিল শ্রেণির ছাত্র ছিল। ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার পর সে নিয়মিত রাজপথে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিত।