নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফেরানোর দাবিতে অনশনে বসেছেন ৯ জন শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এদের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে তারা অনশন ভাঙেননি। চারুকলা ইনস্টিটিউটকে নগরী থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় পার হওয়ার পরও সিদ্ধান্ত না আসায় সোমবার বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে আমরণ অনশনে বসেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের এই ৯ শিক্ষার্থী।
অসুস্থ হওয়া এই দুই শিক্ষার্থী হলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান ও প্রথম বর্ষের মাহমুদুল ইসলাম। তারা দুজনসহ বাকি অনশনকারীরা গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনেই অবস্থান করছিলেন।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রশাসনিক ভবনের এসে অসুস্থ দুই শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘অনশনে থাকা দুই শিক্ষার্থী পানি শূন্যতা এবং সুগার লেভেল নিচে নেমে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’ লাগাতার অনশনে থাকলে আরও শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে যাওয়া শঙ্কা করেছেন চিকিৎসা কর্মকর্তা আবু তৈয়ব।
অনশনরত বাকি সাত শিক্ষার্থী হলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম, চতুর্থ বর্ষের নূর ইকবাল, তৃতীয় বর্ষের মো. শাহরিয়ার হাসান, দ্বিতীয় বর্ষের ইসরাত জাহান, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান ও প্রথম বর্ষের তরিকুল ইসলাম।
মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে চারুকলা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভা করে ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন কর্মসুচি পালন করব।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদ ও ইনস্টিটিউট হাটহাজারীর মূল ক্যাম্পাসে হলেও চারুকলা ইনস্টিটিউট ২২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম নগরীতে। ২০২২ সালে শ্রেণিকক্ষের ছাদ থেকে ইট-সিমেন্ট খসে পড়লে ওই বছরের ২ নভেম্বর থেকে ক্লাস বর্জন করে মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা।
পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি তারা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। এ অবস্থায় ১ ফেব্রুয়ারি রাতে চারুকলা ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। তবে ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রæয়ারি শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে হামলা চালান নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ১০ ডিসেম্বর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে ১২ ডিসেম্বর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওইদিন বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বলেছিলেন, ‘আজকে আনঅফিসিয়াল বৈঠক হয়েছে তাদের সাথে। তাদের সাথে কথা বলে ‘প্রিন্সিপালি অ্যাগ্রি’ করেছি তাদের নিয়ে আসার জন্য।’
‘ভাইস চ্যান্সেলর স্যারও আমাদের বলেছেন, আমরা ছাত্রদের দাবির সাথে একমত। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্ষদগুলো থেকে অনুমোদন দিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।’ বেঁধে দেওয়া সেই সময়সীমার মধ্যে চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে না আসায় সোমবার আবারও আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।