ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের (বর্তমানে পাকিস্তান) শিয়ালকোটের একটি জাতিগত কাশ্মীরি পরিবারে ১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার হলেন কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ সাপ্রু যারা ইসলাম গ্রহণ করে। উনিশ শতকে, শিখ সাম্রাজ্য যখন কাশ্মীর জয় করছিল, তখন তার দাদার পরিবার পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে গিয়ে বসবাস শুরু করে। ইকবাল প্রায়শই তার লেখায় কাশ্মীরি বংশের ধারা উল্লেখ ও স্মরণ করতো। পাঞ্জাবের ব্রিটিশ আর্মির কাছে শিখদের পরাজয়ের পর খ্রিষ্টান মিশনারিরা শিয়ালকোটে শিক্ষা প্রচারের উপর গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। এই সময়েই শিয়ালকোটে স্কটিশ মিশন কলেজ স্থাপিত হয়। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজ লিবারেল আর্টস্ এর কোর্সসমূহের অনেকগুলোতেই আরবি ও ফার্সি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হতো। যদিও এই সময় বেশির ভাগ স্কুলেই ফার্সি ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এই স্কটিশ মিশন কলেজেই ইকবাল সর্বপ্রথম আধুনিক শিক্ষা প্রাপ্ত হন।
ইকবাল তার কাব্য প্রতিভার স্বীকৃতি পান তার শিক্ষক সাইয়িদ মীর হাসানের কাছ থেকে। ১৮৮৫ সালে স্কটিশ মিশন কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ইকবাল লাহোরের সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। দর্শন, ইংরেজি ও আরবি সাহিত্য নিয়ে তিনি পড়াশোনা করে, এখান থেকে তিনি স্বর্ণ পদক নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৯২ সালে ইকবাল স্কটিশ মিশন কলেজ হতে তার পড়াশোন শেষ করেন। তিনি ১৮৯৫ সালে চারুকলা অনুষদ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৮৯৯ সালে যখন তিনি মাষ্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন ততদিনে তিনি সাহিত্য অঙ্গনে পরিচিত ব্যক্তিত্ব।
১৯০৮ সালে ইকবাল ইউরোপ হতে দেশে ফিরে আসেন এবং লাহোরের সরকারি কলেজে যোগদান করেন। এই সময় একই সাথে তিনি আইন ব্যবসা, শিক্ষাদান ও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। মূলত অর্থনৈতিক কারণেই তিনি ১৯০৯ সালে সার্বক্ষণিক আইন পেশায় নিয়োজিত হন। ইকবাল কেবল একজন উঁচুমানের লেখকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন পরিচিত আইনজীবীও। তিনি দেওয়ানী ও ফৌজদারি উভয় বিষয়েই লাহোর হাইকোর্টে হাজির থাকতেন। তার নামে ১০০ টিরও বেশি রায় দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি তার সাহিত্যর জন্যে বেশি সময় ব্যয় করতেন। তিনি তার পিতাকে প্রতিজ্ঞা করেন যে কবিতার বিনিময়ে কোনো অর্থ তিনি গ্রহণ করবেন না। অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে তিনি সে প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেন নি। ইতোমধ্যেই বিখ্যাত কবি ইকবালকে ব্রিটিশ সরকার ‘আসরার-ই-খোদায়ী’ পুস্তকের জন্য নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।
আল্লামা ইকবাল তার কয়েকটি কবিতা ও রচনার জন্য অমর হয়ে আছেন। এরমধ্যে আসরার ই খুদি, শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া, দ্যা রিকনস্ট্রাকশন ওফ রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম, বাআল ই জিবরাইল, জাভেদ নামা ইত্যাদি অত্যন্ত গভীর দার্শনিক ভাব সমৃদ্ধ রচনা। আল্লামা ইকবালের লেখনিতে যে ইসলামী পুনর্জাগরণের আওয়াজ উঠেছিল তা সমসাময়িক অনেক ব্যক্তি ও আন্দোলনকে বহুলভাবে প্রভাবিত করেছে। তার দর্শনে প্রভাবিত হয়েছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, যিনি পাকিস্তানের কায়েদে আজম। তার ইসলামী পুনর্জাগরণের চেতনাকে সারা জীবনের তরে জীবনোদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করে একটি পুনর্জাগরণী দলের জন্ম দেন তার স্নেহধন্য সৈয়দ আবুল আ’লা মওদুদি। যার প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলামী পুনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখিয়েছে আল্লামা ইকবাল শিয়া চিন্তানায়কদেরকেও প্রভাবিত করেন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া