পূর্বদেশ ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী-কন্যা এবং তিন সাবেক সংসদ সদস্যের এক চক্র মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক। ওই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
যে অভিযোগ দুদক হাতে পেয়েছে, তাতে মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল, তাদের মেয়ে নাফিসা কামাল, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজামউদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ যুক্ত আছেন ওই সিন্ডিকেটে। খবর বিডিনিউজের।
দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চক্রে ঢুকে তাদের রমরমা ব্যবসা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
ঠিক কী অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আছে জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে তারা বিদেশে কর্মী পাঠিয়েছে। আবার তাদের নিজস্ব এসব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর হারও অনেক বেশি।
দুদকের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে অভিযোগ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে দুদক। তাতে বলা হয়েছে, ফেনী থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বিদেশে কর্মী পাঠাতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেড নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন। সাড়ে তিন বছরে মাত্র ১০০ কর্মী বিদেশে পাঠায় ওই এজেন্সি। কিন্তু ‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটে’ যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে প্রায় ৮ হাজার কর্মী সে দেশে গেছেন নিজাম হাজারীর এজেন্সির মাধ্যমে। মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি কর্মী পাঠানো এজেন্সির তালিকায় ৪ নম্বরে রয়েছে স্নিগ্ধা ওভারসিজ।
ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি খোলেন। মালয়েশিয়ায় এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মত কর্মী পাঠিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে এই এজেন্সি একাই ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর ছাড়পত্র নিয়েছে।
ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের এজেন্সি আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর দিক দিয়ে পঞ্চম অবস্থান রয়েছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার আগে তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না। বিদেশে পাঠিয়েছিল মাত্র ২৩৮ জন কর্মী। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে আসে। এই এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৭ হাজার ৮৪৯ জন কর্মী। ওই চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ও মেয়ে নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনালের নামে মালয়েশিয়ায় গেছেন মোট ৯ হাজার ৮৬১ জন। চক্র গঠনের সময় আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।