মুরগিতে স্বস্তি, মাছে অস্বস্তি

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর বিভিন্ন বাজারে মুরগির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও মাছের বাজারে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। বাজার সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি দুইশ টাকার নিচে নামলেও মাছের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অপরদিকে মৌসুম শেষ হওয়ায় কয়েকটি সবজির দাম ১০০ টাকা পার করেছে। গতকাল শুক্রবার নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
ক্রেতারা জানান, গরু ও খাসির মাংস আগেই নাগালের বাইরে ছিল, এখন মাছের দামও বেড়ে যাওয়ায় বাজারে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা।

মাছের বাজারে অস্থিরতা
সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় পুকুর, হাওর ও নদী বা ঘেরের মাছের দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে দেশি জাতের মাছের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে চিংড়ি, শিং, টেংরা, শোল ও পুঁটির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। দেশি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা। চাষের চিংড়ির দামও বেড়ে হয়েছে ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকা। টেংরা ও শিং মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে যা ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। শোল মাছের দাম বেড়ে ৮৫০ টাকায় পৌঁছেছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। রুই ও কাতলা মাছেও বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে তেলাপিয়া ও পাঙাশের মতো সাধারণ মাছের দাম অপরিবর্তিত থেকে ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা আকিল আহমদ বলেন, বাজারে মাছের চাহিদা রয়েছে, কিন্তু সরবরাহ নেই। উৎস এলাকা থেকে মাছ সংগ্রহের খরচ বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে।
মুরগির বাজারে কিছুটা স্বস্তি : উত্তাপ ছড়ানো মুরগির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৮০ টাকায় নেমে এসেছে। সোনালি মুরগি ২৫০- থেকে ২৭০ টাকায় এবং দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিছুদিন আগেও ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি ছিল।
মুরগি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ঈদের পর মানুষ আবার মুরগি কিনতে আসছেন। চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ ঠিক থাকায় দাম একটু কমিয়ে বিক্রি করছি। আবার অনেকে মাছের দাম বেশি দেখে আবার মুরগির দিকে ঝুঁকছে। এখন বাজারে অস্থিরতা কম।

গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল : গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন না থাকলেও সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে, খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা।
মাংস ব্যবসায়ী আবিদ হাসান জানান, দাম আগের মতোই আছে, তবে বিক্রি কিছুটা কম। মানুষ মাছ কিনতে গিয়ে দাম শুনে হতাশ হয়ে মাংস কিনতে আসছে, কিন্তু এখানেও দাম শুনে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে।
অপরদিকে বাজারে কিছুদিন ধরে সবধরনের সবজির দাম বাড়তির দিকে। গেল রমজান মাস জুড়ে সবজির দাম কম থাকায় ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কিনতে পেরেছেন। তবে ঈদের পর থেকে বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। বাজারে এখন সব সবজির দাম বাড়ছে। সবচেয়ে দামি সবজির তালিকায় আছে কাঁকরোল, যার প্রতি কেজি ১৪০-১৮০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি গোল বেগুনও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে, পাশাপাশি লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, ধুন্দল ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, জালি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, লেবু মানভেদে প্রতি হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৩৫ টাকা এবং গাজর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
বাজার করতে আসা আবু বক্কর বলেন, বাজারে সবজির দাম বাড়তি। বিশেষ করে ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই সবজির দাম বাড়ছে। এখানে ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আর অন্যান্য সবজির দাম তো সেঞ্চুরি পেরিয়েছে। এত দামি সবজি আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের পক্ষে কিনে খাওয়া কঠিন।
সবজির দাম কেন বেড়েছে জানতে চাইলে বিক্রেতা আবু হোসেন বলেন, বাজারে এখন সবজির সরবরাহ কম। মূলত মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে এসব সবজি বাজারে সরবরাহ কম, সে কারণেই দাম বাড়তি যাচ্ছে। শীতের সবজি শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাজারে আস্তে আস্তে দাম বাড়তে থাকে। এখন নতুন করে, এই মৌসুমের সবজি উঠবে কিছুদিন পর। নতুন সবজি উঠতে শুরু করলে সবজির দাম আবার কিছুটা কমে আসবে।
নগরীর অন্যান্য বাজারে দামের তারতম্যের বিষয়ে আরেক সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের অন্যান্য বাজারের তুলনায় রেয়াজউদ্দিন বাজারের সবজির দাম কিছুটা কম। অন্য বাজারে যদি কোনো সবজির দাম খুচরা ৮০ টাকা হয়, তাহলে তা রেয়াজউদ্দিন বাজারে ৬০ টাকা। আসলে যারা এখান থেকে সবজি কিনে নিয়ে গিয়ে নগরীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে, তাদের পরিবহন খরচ, রাস্তা খরচ, দোকান ভাড়া, কর্মচারী খরচ সব মিলিয়ে তারা কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি করে। তবুও ঈদের পর থেকে সব ধরনের সবজির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন সবজির শেষ সময়ের মৌসুম, নতুন করে মৌসুম শুরু হলে সবজি বাজারে আসতে শুরু করবে, তখন ধীরে ধীরে সবজির দাম কমে আসবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। কোনো সিন্ডিকেট তৈরি করতে দেওয়া হবে না। দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত নিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার দর স্বাভাবিক রয়েছে, আশা করি এমন স্বাভাবিক থাকবে। তা ছাড়া বাজার দর স্বাভাবিক রাখার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’।