পূর্বদেশ ডেস্ক
যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস পাওয়ার পরদিনই মুক্তি পেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ৭৩ বছর বয়সী আজহার কারা তত্ত্বাবধানে ঢাকার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার্ডিয়াক বøকে ছিলেন। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সেখান থেকেই তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার একেএএম মাসুম জানান।
হাসপাতালে উপস্থিত জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা তাদের এই জ্যেষ্ঠ নেতাকে বরণ করে নেন। পরে একটি কালো রঙের এসইউভিতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগ মোড়ে দলের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। পরে জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহার বলেছেন, ‘আজ আল্লাহর রহমতে আমিরে জামায়াতের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি। গলায় রশি ঝোলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি। আজীবন যেন আমি ইসলামী আন্দোলনের জন্য শহীদ হতে পারি, সেই তৌফিক আল্লাহর কাছে চাই। খবর বিডিনিউজের।
২০১২ সালের ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তখন থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলের পর গতবছর ২ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজহারকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। এর কিছুদিন পর তাকে কারা তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিচারাধীন দশটি মামলা প্রত্যাহারের আদেশ এবং যুদ্ধাপরাধের মামলায় খালাসের রায় কারাগারে পৌঁছানোর পর যাচাই-বাছাই শেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে কারা কর্মকর্তা জানান।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের ছয় ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালে আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৯ সালে প্রথমবার আপিল শুনানি করে সেই রায় বহাল রেখেছিল তখনকার আপিল বেঞ্চ।
জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর আজহারের রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আপিল শোনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার সেই রায়ে আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এই রায় আসে। এর আগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিলে আর কেউ খালাস পাননি।
রায়ে বলা হয়, আর কোনো মামলা না থাকলে আজহারকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। সেজন্য তার আইনজীবীদের আবেদনে খালাসের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আদেশও প্রকাশ করে আপিল বিভাগ।
ওই সংক্ষিপ্ত আদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে মঙ্গলবার রাতেই কারাগারে পৌঁছায়। এরপর বুধবার সকালে তাকে হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
আজহারের মুক্তির রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে।
অন্যদিকে আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন।