মনিরুল ইসলাম মুন্না
দীর্ঘ ৫৮ দিন সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা গত বুধবার (১১ জুন) শেষ হয়েছে। তারপর থেকে মাছভর্তি ট্রলার নিয়ে আসছে জেলেরা। তবে সমুদ্রে ইলিশসহ বড় মাছ ধরা পড়ছে কম। বেশিরভাগই ছোট মাছ ধরা পড়ছে। তার মধ্যে লইট্যা, চিংড়ি, রূপচাঁদা, ফাইস্যা, ছুড়ি, পোয়া ইত্যাদি। গতকাল সোমবার জেলেদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
জানা গেছে, সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় উপক‚লজুড়ে নেমে আসে নীরবতা। স্থবির হয়ে পড়ে সবকটি ফিশারি ঘাট ও জেলেপল্লি। দীর্ঘ ৫৮ দিন স্থায়ী হয় এই বিরতি। অবশেষে ১১ জুন মধ্যরাতে শেষ হয় সেই নিষেধাজ্ঞা। এরপরই উপক‚লীয় এলাকার শত শত জেলে ট্রলার ও নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে সাগরে। ইতোমধ্যে অনেকে ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ নিয়ে উপক‚লে ফিরতে শুরু করেছেন। তাতে পুরনো কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে ফিশারি ঘাট ও জেলেপল্লিগুলোতে। জেলেসহ সংশ্লিষ্টদের মুখে হাসি ফিরেছে।
গতকাল সোমবার সকালে রাণী রাসমনি ঘাটে মাছভর্তি ট্রলার ও নৌকা নিয়ে সাগর থেকে ফিরেছেন অনেক জেলে। তাদের একজন স›দ্বীপের আসাদুজ্জামান। ট্রলার থেকে নেমেই মুখভরা হাসিতে তিনি জানান, সাগরে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়ছে। ইলিশও আছে। তবে অনেকটা কম। লইট্যাসহ ছোটো মাছ পাওয়া যাচ্ছে বেশি। সকাল সকাল বাজারে বাজারে তুলবো।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ১১ জুন মধ্যরাতেই আমরা কয়েকজন জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাই। যদিও গভীর সাগরে যাইনি, তবে সীতাকুন্ড, মিরসরাই, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও ফেনী উপক‚লের অনেক জেলেকে মাছ ধরতে দেখা গেছে। আমরাও তাদের সঙ্গে মাছ ধরা শুরু করি এবং আশানুরূপ মাছ পেয়েছি। আমার সঙ্গে ৩০-৩২টি ট্রলার ও নৌকাও মাছ নিয়ে ফিরে এসেছে।
নিষেধাজ্ঞার সময় কেমন কেটেছে জানতে চাইলে তিনি পূর্বদেশকে বলেন, এ সময় জেলেরা মানবেতর জীবন যাপন করে। তারা ধৈর্যের পরীক্ষা দেয়। এবার সেই অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। অধিকাংশ গভীর সমুদ্রগামী ট্রলার এখনও সাগরে রয়েছে। তারাও প্রচুর মাছ ধরার খবর দিয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে তারা আশানুরূপ মাছ নিয়ে সবাই নিরাপদে উপকূলে ফিরতে পারবে।
সাগরিকা জেলেপাড়া এলাকার রহিম নামে এক ট্রলার মালিক বলেন, প্রতিটি বোটে এক জো’তে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ পড়ে। এই খরচ পুষিয়ে লাভ করতে হলে প্রতিটি বোটে অন্তত ৫০ মণ মাছ ধরতে হয়। আমরা আশাবাদী, এবার সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যাবে এবং জেলেরা ভালো ফল পাবেন। তিনি আরও জানান, সাগর থেকে ফেরা নৌকা ও ট্রলারের মাছ সংরক্ষণ ও বাজারজাত করার প্রস্তুতিও চলছে। জেলে পরিবারগুলোও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগরীর চাক্তাই ফিশারি ঘাটেও কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। সেখানে মাছের আড়তগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে ও প্রয়োজনীয় সংস্কার চলছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রথমবারের মতো প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ সরকার। এই সময়টিকে ইলিশসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের প্রজননের জন্য উপযোগী ধরা হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় সফলভাবে কার্যকর হওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অন্তত ৪৭৫টি সামুদ্রিক মাছের প্রজাতির প্রজনন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, সাগরে মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বাড়াতে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলেরাই এখন লাভবান হবেন। বর্তমানে ছোট মাছ আসছে বেশি। বড় মাছের জন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।