মিরসরাই-ফটিকছড়ি সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

3

মিরসরাই প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৫ দশকের পুরনো বেইলি ব্রিজ ধসে পড়েছে। ব্রিজটি ধসে পড়ায় মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছি হয়ে গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মিরসরাই-ফটিকছড়ি সড়কের পূর্ব গোভনীয়া জামে মসজিদ সংলগ্ন বেইলী ব্রিজটির গোড়ার উত্তরাংশের মাটি সরে যাওয়ায় শনিবার বিকেলে ব্রিজটি ছড়াখালে ধসে যায়।
জানা গেছে, মিরসরাই পৌরসভার ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে গোভনীয়া ছড়ার উপর প্রায় ৫ দশক পূর্বে পুরাতন একটি পাকা ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে সেই ব্রিজের ভিতের উপর বেইলী ব্রিজটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলাকে সংযোগস্থাপনকারী আঞ্চলিক এই সড়কটি দিয়ে পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত শাক-সবজি, ফলমূল ছাড়াও কাঠ, বাঁশ, বালুবোঝাই ভারী যানবাহন নিয়মিত চলাচল করে। যোগাযোগের সহজলভ্যতায় পার্শ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার অনেক পণ্য ও মানুষ চলাচল করেন এই সড়ক দিয়ে। গত ৬ জুন ভারী বর্ষণ হলে পুরাতন পাকা ব্রিজের অংশ ধসে পড়লে বেইলী ব্রিজের উপর পুরোপুরি চাপ পড়ে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানানোর পর ব্রিজটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় মিরসরাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। তবে গত কয়েকদিন যাবত ফের ভারী বর্ষণ শুরু হলে গত শনিবার বিকেলে ব্রিজটির একাংশ ধসে গিয়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বিকল্প সড়ক হিসেবে প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে বাদামতলী-আমবাড়ীয়া সড়ক হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা।
ব্রিজটি ধসে পড়ার পূর্বে সংস্কারের জন্য প্রচেষ্টা চালান স্থানীয়রা। তাদেরই একজন আবু সাঈদ মো. মুছা। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে এখানে একটা পাকা ব্রিজ ছিল। পাকা ব্রিজটি যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় তখন ওই ব্রিজের উপর বেইলী ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কিছুদিন পূর্বে বেইলী ব্রিজের নিচের পাকা ব্রিজটি ধসে পড়ে গেলে বেইলী ব্রিজটি একেবারে নড়বড়ে হয়ে যায়। তখন আমরা স্থানীয়রা বসে সিদ্ধান্ত নিই দ্রæত কিভাবে ব্রিজটি সংস্কার করা যায়। পরে বিষয়টি মিরসরাই পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানালে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বেইলী ব্রিজটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়’।
মিরসরাই-ফটিকছড়ি সড়কে নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশা চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিরসরাই পৌরবাজার থেকে নারায়ণহাট-ফটিকছড়ি পর্যন্ত নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের একটি রুট রয়েছে। ব্রিজটি ধসে যাওয়ায় সেই রুটটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যাত্রী তেমন হচ্ছে না, যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। যাত্রীরা এই সড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করায় আমাদের আয়ও কমে গেছে। আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। দ্রুত ব্রিজটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি’।
ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, ‘মিরসরাই-ফটিকছড়ি সড়কটি ৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে। এটি দুই উপজেলার যোগাযোগের জন্য অন্যতম সড়ক। সড়কের বেইলী ব্রিজটি ধসে যাওয়ায় স্থানীয়রা এখন বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছেন। মিরসরাই সদর থেকে ব্রিজটির দূরত্ব ৩-৫ মিনিটের কিন্তু ব্রিজটি ধসে পড়ায় বিকল্প সড়ক হিসেবে বাদামতলী-আমবাড়ীয়া সড়ক ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের। এই সড়ক দিয়ে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও পাহাড়ে উৎপাদিত বাঁশ, কাঠ, লেবু, মৌসুমি নানা ফলমূল ও শাকসবজি আনা নেওয়া করা হয়। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন ফল ব্যবসায়ী ও এই রুটের সিএনজি অটোরিকশা চালকরা’।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল খায়ের বাদশা, দিদারুল আলম ও আব্দুল্লাহ আল আহাদ জানান, গোভানীয়া ছড়ার উপর প্রায় ৫ দশক পূর্বে বেইলী ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। আষাঢ় মাসের শুরু থেকে এই কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ব্রিজটি একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। অবশেষে শনিবার ব্রিজের গোড়ার অংশের মাটি সরে যাওয়ায় ব্রিজটি ধসে গিয়ে যানবাহন চলাচল পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তবে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঁয়ে হেঁটে ব্রিজ পাড়ি দিলেও তাতে প্রাণহানির ঝুঁকি রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মিরসরাই পৌরসভার প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন মিরসরাই-ফটিকছড়ি সড়কের বেইলি ব্রিজটি ধসে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি শনিবার বিকেলে ব্রিজটি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সময়ে পুনঃনির্মাণ বা সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সওজকে লিখিতভাবে চিঠি দেওয়া হবে। এছাড়া বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি’।
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগের আঞ্চলিক প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এটি সংস্কারের জন্য আমাদের সবরকম প্রস্তুতিও ছিল। তবে ভারী বর্ষণ ও ছড়ায় প্রবল স্রোতের কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। আবহাওয়ার উন্নতি হলে আমরা ব্রিজটির সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো’।