মিরসরাই চরশরত মডেল হাই স্কুল কালবৈশাখীতে বিধ্বস্ত

1

মিরসরাই প্রতিনিধি

মিরসরাইয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে স্কুলভবন। এতে করে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিধ্বস্ত ভবন মেরামতের অর্থও নেই স্কুল তহবিলে। ওই ভবনে পাঠদান চালু করা নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটছে না। ভবন সংকটে যে বেঞ্চে পূর্বে ৩ জন শিক্ষার্থী বসে পাঠগ্রহণ করত এখন সেখানে বসছে ৫ জন শিক্ষার্থী। যে কক্ষে ১ শ্রেণীর পাঠদান চলত এখন গাদাগাদি করে সেখানে চলছে দুই শ্রেণীর পাঠদান। এমনই চিত্রের দেখা মিলে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরত মডেল হাই স্কুলে।
সরেজমিনে চরশরত মডেল হাই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, গত ২১ এপ্রিল ভোররাতের কালবৈশাখী ঝড়ে স্কুলের একটি ভবন পুরোপুরিভাবে বিধ্বস্ত হয়। উড়ে যায় ওই ভবনের টিনের চালা। নষ্ট হয়ে যায় ১০ টি বেঞ্চ, সিলিং ফ্যানসহ বেশকিছু আসবাবপত্র। বর্তমানে ওই ভবনে ক্লাশ করার মতো কোন উপায় নেই। বিধ্বস্ত ভবনে পূর্বে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর ১১০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হত। ভবনটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করছেন শিক্ষার্থীরা। আগে যেই বেঞ্চে ৩ জন বসে পাঠগ্রহণ করত এখন সে বেঞ্চে ৫ জন গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করছেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, ২০০৯ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে নানা সংকট লেগেই রয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে নির্মিত সেমিপাকা ভবনটি কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। ভবনটি মেরামতে প্রয়োজন প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু স্কুল তহবিলে ওই পরিমাণ অর্থ নেই। তাই ওই ভবনে পাঠদান কবে নাগাদ চালু করা যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
এদিকে ২৩ এপ্রিল স্কুল ভবনটি মেরামতের জন্য আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত আবেদন করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজিব নাথ। তবে এখনো কোন সহযোগিতা পাননি।
স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবু রায়হান, জ্যোতি দাশ ও শাহানা আক্তার জানান, এমনিতেই স্কুলের ভবন সংকট। এরমধ্যে ঝড়ে একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি দ্রæত মেরামত করা না হলে ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চরমভাবে ব্যাহত হবে। তাই ভবন মেরামতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী আফিয়া আনজুম বলেন, ঝড়ে আমাদের শ্রেণী কক্ষ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন নবম শ্রেণীর সাথে ক্লাশ করছি। আমাদের ক্লাশ রুটিন এলোমেলো হয়ে গেছে। একটি কক্ষে দুইটি শ্রেণীর ক্লাশ হওয়ার কারণে আমরা শিক্ষকদের কথা ভালোভাবে বুঝতে পারিনা।
স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী তাহুরা আক্তার বলেন, আমাদের শ্রেণী কক্ষ কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে ক্লাশ করার মত নেই। একটি কক্ষে দুইটি শ্রেণীর পাঠদান চলছে। ক্লাশ করা বড় সমস্যা হয়ে পড়েছে।
স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রব বলেন, স্কুল ভবন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পাঠদান করতে পারছি না এবং শিক্ষার্থীরাও পাঠে মনোযোগ দিতে পারছে না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজিব নাথ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে স্কুলের ৫৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২২ ফুট প্রস্থের একটি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ের তীব্রতায় ভবনের শ্রেণী কক্ষের টিনের চালা উড়ে গিয়ে কক্ষগুলোর আসবাবপত্রেরও ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়েছে। দ্রুত ভবনটি মেরামত করা অত্যন্ত জরুরি। মেরামতে ব্যয় হবে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু স্কুল তহবিল থেকে এই ব্যয় নির্বাহ করা মোটেও সম্ভব নয়।