এম. আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই
সেতুর মাঝের অংশ ধ্বসে পড়ে বেরিয়ে এসেছে রড, দু’পাশের রেলিংগুলো ভেঙ্গে গেছে; নিচের অংশ খসে খসে পড়ে বেরিয়ে এসেছে রড। প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে ভাঙন দেখা দেয় প্রায় ১০ বছর আগে। দিনে দিনে নিশ্চিহ্নপ্রায় সেতুটির জন্য চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এক ইউনিয়নের ৫ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ। দিনে দিনে সেতুটি ভেঙে নিশ্চিহ্ন হতে চললেও সংশ্লিষ্ট কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই। যেকোনো মুহুর্তে পুরো সেতুটি ধ্বসে পড়ার আশংকাও রয়েছে। এমনই চিত্র ৫ দশকের পুরনো চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার একটি ভাঙ্গা ব্রিজের। উপজেলার ৯ নম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর-আবুনগর গ্রামের আবদুস সোবহান সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে সেতুটির অবস্থান। প্রতিনিয়ত ভাঙ্গা সেতুর কারণে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে।
জানা যায়, মিরসরাই উপজেলার ৯ নম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর-আবুনগর গ্রামের ৩কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আবদুস সোবহান সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে ব্রীজটি সত্তরের দশকের শুরুর দিকে নির্মাণ করা হয়। গত ২০১৫ সালের দিকে ব্রীজটিতে প্রথম ভাঙন দেখা দেয়। এরপর যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। উপরের দুইটি অংশে ভেঙ্গে পড়েছে, বেরিয়ে এসেছে রড়। ফাটল ধরেছে পিলারে, দুই পাশের রেলিং অনেকাংশ ভেঙ্গে গেছে; নিচের অংশে খসে খসে পড়ে রড় বেরিয়ে এসেছে। প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে সাজেদিয়া নুরানী ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, মিঠাছরা আইডিয়াল স্কুল, মান্দারবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এটি একাডেমী, মিঠাছরা উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠাছরা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, মান্দারবাড়ীয়া শাহ ওলীয়া বালিকা মাদ্রাসার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী চলাচল করেন। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেকুটি সেতুটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয় জনসাধারণ। যেকোনো মুহুর্তে ঘটতে পারে প্রাণহানীও। জনপ্রতিনিধিরা নতুন সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে আসলেও আজও সেতুটি নতুন করে নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। সেতুটি দিয়ে আগে তিন চাকার যানবাহন ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও এখন সেই উপায়ও নেই।
সাজেদিয়া নুরানী ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা আতা উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের ৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তন্মধ্যে আড়াই শতাধিক কোমলমতি ও শিশু শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই সেতু ব্যবহার করে মাদ্রাসায় আসেন। আমরা এবং অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকি’।
শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা নাইমুল হুদা বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলার বড় বাজারগুলোর মধ্যে একটি মিঠাছরা বাজার। এই সেতু হয়ে কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে বাজারে তাদের পণ্য আনা নেওয়া করে থাকেন। বর্তমানে ব্রীজটি দিয়ে হাঁটাও কষ্টসাধ্য। তাই কোন মুমূর্ষু রোগী, ডেলিভারী রোগী যথাসময়ে হাসপাতালে নিতে না পারার কারণে প্রাণহানীর সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে’।
সাজেদিয়া নুরানী ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন সামির বলেন, ‘প্রতিদিন মাদ্রাসায় ভয়ে ভয়ে যাই আবার ছুটি হলে ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরি। এতবেশি ভয়ের মধ্যে থাকি যে- যে কোনো সময় সেতুটি সেতুটি আবার ভেঙ্গে পড়ে’।
ব্যবসায়ী নুর সোবহান বাদশা বলেন, ‘প্রতিনিয়তই এই সেতুতে মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তাই দ্রুত সেতুটি পুণরায় নির্মাণ খুবই জরুরি’।
সিএনজি অটোরিকশা চালক মীর হোসেন বলেন, ‘আমি এই সড়কে নিয়মিত যাত্রী আনা নেওয়া করতাম। সেতুটি ভেঙ্গতে থাকায় যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, যাত্রীদেরও কষ্ট বেড়ে গেছে।’
কৃষক আব্দুল হাই বলেন, ‘ প্রায় ৫০ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এরপর আর কোন সংস্কার করা হয়নি। ২০১৫ সালের দিকে সেতুটির উপরের অংশ আস্তে আস্তে খসে পড়া শুরু হয়’।
মিঠাছরা আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘এই সেতু ব্যবহার করে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। দীর্ঘকাল ধরে এই অবস্থার ফলে আমরাও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভয়ে থাকি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে অভিভাবকরাও ভয়ের মধ্যে থাকেন। এই অবস্থা থেকে দ্রæত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এলজিইডির মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী রনি সাহা বলেন, ‘সেতুটি সম্পকে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। সম্প্রতি আমি সেতুটি সম্পর্কে জেনেছি। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুটি পূণরায় নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে’।