মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নিল আরাকান আর্মি

15

পূর্বদেশ ডেস্ক

আরাকান আর্মি রোববার মংডু টাউনশিপ দখলের পর মিয়ানমার-বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মিয়ানমার অংশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আরাকান আর্মি জানিয়েছে, কয়েক মাসের সংঘর্ষের পর রোববার সকালে মংডু শহরের বাইরে অবস্থিত জান্তার শেষ সীমান্ত ঘাঁটি, বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নং ৫, দখল করে নিয়েছে তারা। মন্ডু দখলের পর নাফ নদীর আরাকান জলসীমায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
আরাকান আর্মি আরও জানায়, তারা আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
রাখাইন গণমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার মংডু যুদ্ধের পরে আরাকান আর্মি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ জান্তার সৈন্য এবং প্রায় ৮০ জন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীকে আটক করেছে।
মংডু দখলের জন্য আরাকান আর্মি মে মাসের শেষ দিকে অভিযান শুরু করে এবং ছয় মাসের মধ্যে টাউনশিপটির পুরো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করলো।
আরাকান আর্মি এখন মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী তিনটি টাউনশিপ, মংডু, বুথিডং (রাখাইন রাজ্যে) এবং পলেটওয়া (চিন রাজ্যে), সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
জাতিসংঘ গত মাসে জানিয়েছে, রাখাইনে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যেখানে জান্তা সড়ক ও জলপথ অবরোধ করে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ, এমনকি আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
আরাকান আর্মি এখন দক্ষিণ রাখাইনের গওয়া, তাউংউপ, এবং আন্ন টাউনশিপ দখলের জন্য লড়াই চালাচ্ছে। তারা আন্ন টাউনশিপের বেশিরভাগ অংশ এবং ৩০টির বেশি জান্তার ঘাঁটি ও অবস্থান দখল করেছে।
আরাকান আর্মি রাখাইনের ১৭টির মধ্যে প্রায় ১৩টি টাউনশিপ এবং পার্শ্ববর্তী চিন রাজ্যের পলেটওয়া টাউনশিপ দখল করেছে।
এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে টেকনাফের নাফ নদী ও সাগরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব জেলে মাছ ধরতে যাবে তাদের সতর্কভাবে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে। সোম ও মঙ্গলবার (৯ ও ১০ ডিসেম্বর) উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে মাইকিং করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাত ও বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তের এমন পরিস্থিতিতে নাফ নদী ও সাগরে জেলেদের নৌযান নিয়ে চলাচলে সতর্কতা জারি করাসহ মাছ ধরার ক্ষেত্রে সতর্কভাবে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার জলসীমার দিকে না যাওয়ার জন্য টেকনাফের ফিশিং ট্রলার মালিকদেরও বলা হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, নাফ নদী ও সীমান্ত এলাকা এ মুহূর্তে অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিষয়ে বিজিবির অনুরোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিজিবি-২ টেকনাফ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন নাফ নদীতে টহল জোরদার করেছে। সীমান্তে নিñিদ্র নিরাপত্তায় বিজিবি দিন-রাত জলে ও স্থলে টহল পরিচালনা করছে এবং সোচ্চার রয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানেও রয়েছে।