নিজস্ব প্রতিবেদক
মা-শুধু একটি শব্দ নয়, এটি এক চিরন্তন অস্তিত্ব, এক মহিমান্বিত সম্পর্কের নাম। আজ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘মা দিবস’। এই দিনে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সন্তানরা গভীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করেন তাঁদের জীবনের প্রথম আশ্রয়, প্রথম ভালোবাসা-‘মা’কে। মা দিবসের সূচনা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯০৮ সালে আনা জার্ভিস নামের এক নারী তাঁর প্রয়াত মায়ের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। পরে ১৯১৪ সালে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ধীরে ধীরে এটি ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে, আর এখন এ দিনটি হয়ে উঠেছে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার এক আন্তর্জাতিক দিন।
বাংলাদেশেও মা দিবসের তাৎপর্য কম নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে পারিবারিক পরিসর-প্রতিটি স্তরে সন্তানরা মা-কে শুভেচ্ছা, উপহার কিংবা একটি ভালোবাসাময় আলিঙ্গনের মাধ্যমে জানিয়ে দেন তাদের ভালোবাসা। কিন্তু এর বাইরেও বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। এখনো আমাদের সমাজে অনেক মা রয়েছেন, যারা অবহেলা ও নিঃসঙ্গতায় দিন কাটান। বিশেষ করে বয়সের ভারে ক্লান্ত মায়েরা যখন সন্তানদের ব্যস্ত জীবনে ফিকে হয়ে যান, তখন এই একটি দিন যেন নতুন করে মনে করিয়ে দেয়-‘মা’ কেবল জন্মদাত্রীই নন, তিনিই আমাদের প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু এবং চরম আত্মত্যাগের প্রতীক।
মা শুধু সন্তান ধারণ ও লালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন না। জীবনসংগ্রামে মায়েদের প্রতিনিয়তই লড়তে হয় হাজারো বাধা-বিপত্তির সঙ্গে। বিশেষ করে একক মায়েরা বা শ্রমজীবী মায়েরা সমাজে এক অনুচ্চারিত সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আছেন। মা দিবসে তাদের সেই নিঃশব্দ অবদানের কথাও স্মরণ করা দরকার।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, একটি শিশু প্রথম ভাষা শেখে মায়ের কণ্ঠে, প্রথম ভালোবাসা শেখে মায়ের ছোঁয়ায়, এবং প্রথম নিরাপত্তা অনুভব করে মায়ের বুকে। তাই মা দিবসের তাৎপর্য কেবল একটি দিনে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না—বরং প্রতিটি দিনই হওয়া উচিত মা-কে সম্মান জানানোর দিন।
চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেরা এখন দেশের বাইরে। আজকে সকালে ফোন করে বললো-‘মা, তোমার জন্য একটা গান পাঠিয়েছি’। আমি কেঁদে ফেলেছি আনন্দে।’
মা দিবস পালন হোক কেবল একটি ‘দিন’কে ঘিরে নয়-বরং হোক চেতনার প্রতিদিন। মা-কে ভালোবাসার ভাষা হোক শ্রদ্ধায়, দায়িত্বে ও উপস্থিতিতে। আজকের দিনটি হোক এমন এক শপথের দিন-যাতে আমরা ভুলে না যাই, এই জগতের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় ছিল, আছে, থাকবে-একটি শব্দে, সেটি হলো ‘মা’।