মা তোমার জন্য

4

মা, তুমি ফিরে গেলে। একটা বিকেল-সন্ধ্যা আমাকে বড়ো একা করে দিলো। তোমাকে বিকেলে বাসায় রেখে যাওয়া রক্ত মাংসের সপ্রতিভ মানুষ। আর সন্ধ্যায় ফিরে এলাম সেই দূরযাত্রার বাক্হীন একজনের কাছে।
মা-তুমি শুধু আমার স্মৃতি নও। তুমি আমার জীবনও। আমার চলার পথের বাঁক বদল কিংবা ছোটাছুটির পিছনে তোমার সাগ্রহ উপস্থিতি-আমাকে অজান্তে মনে করিয়ে দেয় তুমি রয়েছো আমার সঙ্গে।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আনন্দ-বেদনায় তুমিই তো ছিলে আমার বিশাল আশ্রয়-উচ্ছ্বসিত একজন। প্যানোরমার তিনতলার নির্জন কক্ষে কতো রাত কাটানো তোমার বেডে বসে। রাত দুপুরে জল জাপটা মাথায় নিয়ে অফিস ফেরা একজন তোমার জেগে থাকার মাঝে যে কী সুখ খুঁজে পেয়েছে তা কি বলার কিংবা বোঝাবার।
জীবনের পথচলার কতো ছন্দপতন। নাড়ি ছেঁড়া মাটির মায়া ছাড়িয়ে কতো কালের বসতবদল, অযাচিত-আকস্মিক ব্যাকুল বেদনা-হাহুতাশ, অক্ষমের গ্লানি যখন কুরে কুরে খায় তখনও দেখি তোমার ঝলমলে মুখ ‘খোকা, আমি তো আছি।’
সে আবার পথে নামা। পথচলা। নিজকে ফিরে পেতে পেতেই-তোমার ভিন যাত্রা। তোমার সময় হলো ফিরে যাওয়ার। চোখ বুজলে ঝিম সন্ধ্যায়। চারদিকে আলো মোম জ্বলা নহর। আমার অন্ধকারে ডোবা। হারিয়ে ফেলা সেই তোমাকে। বর্ণহীন একটা খোলামেলা ছোট্ট রেললাইনে অগ্নি বিষাদে তোমার শেষযাত্রা। আমার পৃথিবী যেনো জনশূন্য। বেদনাবিধূর।
সেই বিষাদ নিয়ে এখনো পথচলা। যখন তখন মনে পড়া-মা তোমাকে। সেই কষ্ট কাকে বোঝাই-কাকে বোঝাই মা…।