মায়ার্সের অতিমানবীয় ইনিংসে হেরেই গেল বাংলাদেশ

28

রান তাড়ার নতুন কীর্তি গড়ে স্বাগতিক বাংলাদেশকে লজ্জার সাগরে ডুবিয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে নিয়েছে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে সফরে আসা এক সময়কার ক্রিকেট পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টটিতে সফরকারী দল জয় পায় ৩ উইকেটে। অথচ ৪র্থ দিনে বাংলাদেশের ন্যাটা স্পিনার তাইজুল ইসলাম বলে গিয়েছিলেন, জিততে ৪র্থ ইনিংসে ২৫০ রানই যথেষ্ট। সেখানে টার্গেট ৩৯৫ রানের। আর এই লক্ষ্যটাও পেরিয়ে গেলো ক্যারিবিয়ানরা!
টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ডটাও এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই। রামনরেশ সারওয়ান ও শিবনারায়ণ চন্দরপলের দুর্দান্ত দুই সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৪১৮ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে গিয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা। ২০০৩ সালের অ্যান্টিগার ওই টেস্ট ফিরলো চট্টগ্রামে। এবার বলতে গেলে ব্যাট হাতে একা লড়ে গেলেন ডেবুট্যান্ট কাইল মায়ার্স। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরিতে আটকে থাকলেন না, ডাবল সেঞ্চুরিতে জয় রাঙিয়ে মাঠ ছাড়লেন বীরের বেশে। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। খেলেছেন অপরাজিত ২১০ রানের অতিমানবীয় ইনিংস।
রেকর্ড বই ওলটপালট করে ফেলা চট্টগ্রাম টেস্টের এমন সমাপ্তি হয়তো কেউই চিন্তা করেনি। ৩৯৫ রানের লক্ষ্য পাওয়ার পর খোদ ক্যারিবিয়ানরাই জোর গলায় জয়ের কথা বলতে পারেনি। কারণ চতুর্থ দিনেই তারা হারিয়ে ফেলেছিল ৩ উইকেট। কিন্তু মায়ার্সের জাদুর কাঠিতে পাশার দান পাল্টে ঐতিহাসিক জয় পেলো সফরকারীরা।
চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে ক্রিজে এসে পঞ্চম দিনের একেবারে শেষ প্রান্তে (২.৩ ওভার বাকী থাকতে) দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছেন মায়ার্স। রানের সঙ্গে ওভারের হিসাব কষে দারুণ সমীকরণ মিলিয়েছেন এই অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান। ৩১০ বলে খেলা ২০ বাউন্ডারি ও ৭ ছক্কায় মার বলে দেয় কতটা আগ্রাসী ছিল তার ব্যাট। অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জানান দেওয়া মায়ার্সের কাছেই আসলে হেরেছে বাংলাদেশ।
এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ে ক্যারিবিয়ানরা লজ্জার সাগরে ডুবিয়েছে মুমিনুল হকদের। চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষেক হয়েছে তিন ক্রিকেটারের। যাদের দুজন মায়ার্স ও এনক্রুমা বনার চতুর্থ উইকেটে গড়েন ২১৬ রানের বিশাল জুটি।
পঞ্চম দিনটা একেবারেই বাংলাদেশের ছিল না। দিনের শুরুতে স্লিপে দু’টি ক্যাচ ছেড়ে প্রথম দুই সেশন উইকেটশূন্য থাকার পর শেষ সেশনের শুরুতে জোড়া আঘাতে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও মায়ার্স বীরত্বে শেষ রক্ষা হয়নি।
চতুর্থ দিনে ২৫তম ওভারে উইকেটের পরের উইকেট পেতে স্বাগতিকদের অপেক্ষা করতে হয় ৯৮ ওভার পর্যন্ত। তাইজুলকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই এলবিডাব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়ার আগে বনার খেলেছেন ৮৬ রানের চমৎকার এক ইনিংস। তার বিদায়ে ভাঙে মায়ার্সের সঙ্গে গড়া ২১৬ রানের জুটি।
বাংলাদেশের আশা আরও উজ্জ্বল হয় নাঈম হাসানের বলে জার্মেইন ব্ল্যাকউড (৯ রান) আউট হলে। এরপর জোশুয়া ২০ রান করে তাইজুলের শিকার হলেও ষষ্ঠ উইকেটে মায়ার্সের সঙ্গে গড়ে যান গুরুত্বপূর্ণ ১০০ রানের জুটি। ক্যারিবিয়ানরা জয় থেকে তখন মোটে ৩ রান দূরে। পরে কেমার রোচও (০) আউট হয়েছেন। কিন্তু একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মায়ার্স (ম্যাচসেরা)।
চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে তাকে দুহাত ভরে দিয়েছে ক্রিকেটদেবতা। পঞ্চম দিনে চেষ্টার পর চেষ্টা করেও তাকে দমানো যায়নি। বরং আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে স্মৃতির পাতায় সাজিয়ে রাখা এক ইনিংস খেলে ক্যারিবিয়ানদের এনে দিলেন রূপকথার জয়। অন্যদিকে অতি আত্মবিশ্বাস নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা বাংলাদেশ ডুবলো লজ্জার সাগরে!