মার্কেট চষে বেড়াচ্ছে দুই দপ্তরের বিশেষ টিম

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

সয়াবিন তেলের সংকট দেখিয়ে রমজানের বাজারকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের কড়াকড়িতে বেশিদূর এগুতে পারেনি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম নিজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমে কড়া বার্তা দিয়েছেন। নিয়ন্ত্রণে আসে তেলের বাজার। মধ্য রমজান শেষে এখন কাপড়ের দোকানে কেনাকাটায় ভিড় বাড়ছে। দোকানদাররা দেশি পণ্যে বিদেশী ট্যাগ লাগিয়ে বেশি দাম নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। একযোগে মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঈদ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্রেতা সেজে বিভিন্ন মার্কেটে চষে বেড়াচ্ছে এই দুই দপ্তরের বিশেষ টিম।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, ‘এটা পবিত্র মাস, এ মাসে যাতে সাধারণ ভোক্তারা কোনভাবেই হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্যই নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। দফায় দফায় অভিযান চলছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করেছিলাম। বাজার মনিটরিংয়ে গিয়ে অসঙ্গতি পাইনি।মাংসের বাজার, কাঁচাবাজার, সেমাই, খেঁজুরসহ ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের সাথে কথা বলেছি। দাম ক্রেতাদের নাগালে এসেছে। বিগত যেকোন সময়ের তুলনায় এ বছর বাজারে দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। বাকি রমজানের সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি ও বাড়তি দামের কোন অভিযান আসলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঈদ বাজারে কেনাকাটায় ভিড় বাড়ায় কাপড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ইনভয়েসের সাথে দাম মিলিয়ে দেখবো। কোন অসঙ্গতি পেলেই জরিমানা করার পাশাপাশি প্রয়োজনে দোকান সিলগালা করে দিব।
রমজানে ও ঈদ বাজারে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তারা যাতে স্বস্তিতে বাজার করতে পারে সেজন্য উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। পুরো চট্টগ্রামের বাজার মনিটরিংয়ে ২১টি সার্কেলে বিভক্ত করে জোরালো অভিযান শুরু করা হয়। এসব সার্কেলে ৪০০টি অভিযান চালানোর টার্গেট নিয়ে বাজার তদারকি চলে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কৃষি অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিদপ্তর রমজানের শুরু থেকেই মাঠে আছে। রমজান শুরু থেকে প্রতিদিনই কোন না কোন বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে। এসময় বেশ কয়েকটি বাজারে দামের অসঙ্গতি, পণ্য তালিকা না টাঙানোসহ নানা অপরাধে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। মুরগী, গরু, মুদি, কাঁচাবাজার, ইফতারের বাজারে নিয়মিত অভিযানের পর এবার ঈদের কেনাকাটা শুরু হওয়ায় কাপড়ের দোকানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
গত শনিবার রিয়াজউদ্দিন বাজারে সেলিম পাঞ্জাবি মিউজিয়াম ও পরিস্থান নামক দুটি বিশেষায়িত দোকানে দাম নিয়ে বড় ধরনের অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। এই দুই দোকানে দেশি পণ্যের গায়ে বিদেশী ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ ট্যাগ লাগিয়ে বাড়তি দাম হাঁকানো হয়। সেলিম পাঞ্জাবির দোকানে ৭ হাজার টাকার একটি পাঞ্জাবির দাম দেওয়া হয় সাড়ে ১১ হাজার টাকা। পরে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা অভিযানে গেলে একই পণ্যের দাম বলা হয় ৭ হাজার টাকা।
এ সময় দোকান মালিককে পণ্য ক্রয়ের ইনভয়েস দেখাতে বললে, তা দেখাতে ব্যর্থ হয়। যে কারণে দুই প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সেলিম পাঞ্জাবি ও পরিস্থানে কম দামের পণ্য বেশি দাম দেখানোর তুঘলকি কাÐ ধরা পড়ার পর ক্রেতা সেজে ঈদ বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরছে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের বিশেষ টিম। নিজেরা ক্রেতা সেজে দাম যাচাই করছে। অসঙ্গতি পেলেই জরিমানা করা হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগ জাতীয় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিটি দোকানে হাজার হাজার পণ্য। প্রতিটি পণ্য আমাদের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব নয়। কোন পণ্যে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লিখা নাই। সব পণ্যে লিখা আছে ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’। দাম বেশি নেয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবসায়ীরা এমন প্রতারণা করছে। ব্যবসায়ীরা যদি আমাদের কথায় সাড়া দেয়, তাহলে মানুষ প্রতারিত হবে না। অভিযানের ধারাবাহিকতা থাকলে ব্যবসায়ীরা শুদ্ধ না হয়ে উপায় নেই। ঈদ পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে। শুরুর দিকে সয়াবিন তেল নিয়ে সোচ্চার হওয়ায় বাজার স্বাভাবিক হয়।
তিনি বলেন, আমরা সেলিম পাঞ্জাবির মতো নামকরা যেসব দোকান আছে সেগুলোও মনিটরিং করছি। আমাদের টিম প্রতিটি মার্কেটে সক্রিয় আছে। যেখানেই দাম নিয়ে অসঙ্গতি মিলবে সেখানেই অভিযান।’