মার্কিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ফলিস্তিনিদের কোনও দাবি পূরণ হয় না

2

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ইসরায়েলের কাছে পেশ করেছে, তা বর্তমান অবস্থায় গাজায় ‘হত্যা ও দুর্ভিক্ষ অব্যাহত রাখার’ শর্ত হিসেবে দেখছে হামাস। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন। তবে হামাস এখনও প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইসরায়েল এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ এটি হামাসের কাছে পেশ করেছেন। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাঈম রয়টার্সকে বলেন, এই চুক্তি আমাদের জনগণের কোনও দাবিই পূরণ করে না, বিশেষ করে যুদ্ধ বন্ধের দাবি। তবে জাতীয় দায়িত্বের ভিত্তিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করছে। হামাস শুক্রবার বা শনিবারের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে বলে এক সূত্র জানিয়েছে। এই নতুন প্রস্তাবের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি, তবে হামাসের একজন উচ্চপদস্থ নেতা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, এতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতি বা মানবিক ত্রাণ অবাধে প্রবেশের কোনও অঙ্গীকার নেই। রয়টার্সের বরাত দিয়ে জানা গেছে, প্রস্তাবে প্রথম ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। প্রথম সপ্তাহে ২৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি (জীবিত ও মৃত) মুক্তির বিনিময়ে ১ হাজার ২৩৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দি এবং ১৮০ জন মৃত ফিলিস্তিনির দেহ ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রস্তাবটি ট্রাম্প, মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের নিশ্চয়তায় হামাসের স্বাক্ষর হওয়া মাত্র গাজায় ত্রাণ পাঠানো হবে বলেও জানানো হয়েছে। ইসরায়েলি সরকার প্রকাশ্যে এই প্রস্তাব অনুমোদনের কথা স্বীকার করেনি। তবে ইসরায়েলি মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবারকে বলেছেন, তিনি উইটকফের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।
ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকিভা এলদার আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলের পক্ষে প্রথমে প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া ‘অস্বাভাবিক’। তার মতে, নেতানিয়াহু হয়তো ভাবছেন যে হামাস এই প্রস্তাব মানবে না, ফলে তিনি তাদের ‘খলনায়ক’ হিসেবে চিত্রিত করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবেন।
গাজায় যুদ্ধবিরতি পুনর্বহালের প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ইসরায়েল চায় হামাস সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হোক, আর হামাস চায় ইসরায়েলি সেনারা গাজা থেকে সরে যাক। এই প্রস্তাবের আগে গত সপ্তাহে বিরোধপূর্ণ খবর প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে হামাস দাবি করেছিল যে তারা উইটকফের সঙ্গে একটি সাধারণ সম্মতি পৌঁছেছে এবং শুধু চূড়ান্ত সাড়ার অপেক্ষায় আছে। হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং মানবিক সহায়তা বাধাহীনভাবে প্রবেশের বিষয়ে আমরা সমঝোতায় পৌঁছেছি।
তবে উইটকফ পরে এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, তিনি যা দেখেছেন তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তার সঙ্গে যুক্ত এক মার্কিন কর্মকর্তাও হামাসের দাবি খারিজ করে আল জাজিরাকে বলেন, এটি ভুল ও হতাশাজনক। ইসরায়েলও হামাসের দাবিকে মানসিক যুদ্ধ ও প্রচারণা বলে আখ্যা দিয়েছে।
ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ ছয় সপ্তাহের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। এরপর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে। চলমান যুদ্ধে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।