পূর্বদেশ ডেস্ক
আগামী নির্বাচনে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে যোগ্য ভোটার হয়ে উঠতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে দুটি পথসভায় আগামী নির্বাচনে ভোটারদের মার্কা দেখে নয় বরং যোগ্য প্রার্থী দেখে ভোট দেওয়ার আহবানও জানিয়েছেন তিনি।
এনসিপির প্রার্থীকে যোগ্য মনে না হলে ভোট দেওয়ার দরকার নেই বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। বিকেল ৪টায় নগরীর চকবাজারে নবাব ওয়ালি বেগ খাঁ (অলি খাঁ) মসজিদের সামনে প্রথম পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, দেশের মানুষের জন্য, দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা আপনাদের কাছে নেমে এসেছি। আমাদের নিজেদের স্বচ্ছ ইনকাম সোর্স রয়েছে। রাজনীতি করে, টেন্ডারবাজি করে আমাদের চলাফেরার করার কোনো প্রয়োজন নাই। আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব থাকবেন। ক্ষমতাকে প্রশ্ন করবেন এবং যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। গত বছর নির্বাচনে একটা ভোটের দাম কত ছিল? দুই হাজার? এবার কত করে নিবেন?
তিনি বলেন, আমাদের দেশের নেতারা রাস্তার টাকা খেয়ে ফেলে, টেন্ডারবাজি করে, গরীবের সম্পদ লুণ্ঠন করেন। আর আমাদের দেশের ভোটাররা ভোট বিক্রি করে দেয়। আমাদের দেশের ভোটাররা আগের রাতের ভোট বিক্রি করে দেয়। আপনার যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের পূর্বে আগে নিজে যোগ্য ভোটার হওয়া উচিত। আমরা কি টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি করব?
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে হাসনাত বলেন, আপনাদের মা-বাবা ও পরিবার যদি ভোট বিক্রি করতে চায় তাহলে প্রতিবাদ করুন। উনাকে বলেন, আপনি আজকে ১ হাজার টাকা দিয়ে ভোট বিক্রি করছেন, ৫ বছর এই নেতা আপনাকে নির্যাতন করবে।
যদি দেখেন এনসিপি থেকে কোন যোগ্য নেতৃত্ব নাই আপনাদের ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নাই, মার্কা দেখে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন নাই। যে আপনার সেবা করবে তাকে আপনারা ভোট দেবেন। যে জাতি ও দেশের কাছে কমিটমেন্ট করেছে আপনারা তাদেরকে ভোট দেবেন।
চকবাজারের পথসভা শেষে এনসিপি নেতারা বহদ্দারহাট মোড়ে আরেকটি পথসভায় অংশ নেন।
সেখানে জনগণের কাছে এনসিপির প্রতি সহযোগিতা চেয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আগামী নির্বাচনে যে দলের প্রার্থীকে আপনারা যোগ্য পাবেন, হক-হালালের পথে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও ছাত্র-জনতার পক্ষে পাবেন, তাদের পক্ষে এসে দাঁড়ান।
পুলিশ ও প্রশাসন জনবিরোধী অবস্থান নিলে ছাত্র-জনতা তাদের প্রতিরোধ করবে বলে হুঁশিয়ার করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, পুলিশ ভাইয়েরা এখন অমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। পুলিশ ভাইদের উপর আমাদের অনেক রাগ, অনেক ক্ষোভ তাই না? আপনারা এই রাগ আর ক্ষোভ রাইখেন না। জুলাই গণঅভুত্থ্যানে আসলে উনাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে। অতীতে এই পুলিশদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা হইছে।
সরকার তার নিজের প্রয়োজনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ এবং পুলিশ লীগ, পুলিশকে তারা লীগ বানিয়েছে। পুলিশের পোশাক পরে আপনারা যারা আছেন, আমরা আপনার সন্তান, ছোট ভাই। আপনার ইনকাম করা টাকায় আমরা খাই। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনার বেতন হয়। আল্লাহর দোহাই লাগে, আপনারা আর কোনো সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হইয়েন না। আমরা ছাত্র-জনতা আপনাদের সাথে একসাথে কাজ করতে চাই।
যারা প্রশাসনে আছেন তাদের সহযোগিতা করতে চান দাবি করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্র-জনতা আপনাদের বিপক্ষে নয়, প্রতিযোগী নয়, আপনাদের সহযোগী।
বহদ্দারহাটের পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে অতীতের শাসন ব্যবস্থা এই বাংলাদেশে চলতে দিতে পারি না। যে আওয়ামী সংবিধান বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, দাঁড়িওয়ালা ধর্মভীরু মানুষদেরকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মধ্য দিয়ে হত্যা করেছে সেই আওয়ামী সংবিধান বাংলাদেশে থাকতে পারে না।
আমরা বেঁচে থাকতে, আমাদের গায়ে এক বিন্দু রক্ত থাকতে, এই দেশে আর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে না। এই দেশে হাসিনার পুনর্বাসন হবে না। আওয়ামী রক্ত আছে এমন কারো পুনর্বাসন হবে না। আওয়ামী সংবিধানকে চিরদিনের মত এই বাংলাদেশে আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করব। নতুন সংবিধানের জন্য আমরা লড়াই করব।
পথসভাগুলোতে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মাহমুদা আলম মিতু ও মো. আতাউল্লাহ, সংগঠক আরমান হোসেন ও আজিজুর রহমান রিজভী এবং চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন শাখার নেতারা বক্তব্য রাখেন।
গতকাল নগরীর ছয়টি স্থানে পথসভা করেছে এনসিপি। এর আগে সোমবার উত্তর চট্টগ্রাম এবং রোববার দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে পথসভা করে দলটি।