মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

তদন্ত কর্মকর্তাদের বদলিজনিত কারণসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানার পাশাপাশি আদালতে দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। বদলি ছাড়াও নানা কারণে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের থানা থেকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে সিএমপির ১৬ থানার শতাধিক কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। ক্লোজড করা হয়েছে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। ঘন ঘন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বেশি সময় লাগছে।
সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) মো. হুমায়ুন কবির পূর্বদেশকে বলেন, মামলার তদন্ত একটি চলমান প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ মামলা তদন্তের দায়িত্ব পালন করেন থানার উপপরিদর্শক মর্যাদার কর্মকর্তারা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের তদন্ত কার্যক্রম তদারক করেন। তেমনি পুলিশে বদলির বিষয়টিও নিয়মিত কার্যক্রমেরই অংশ। কেউ বদলি হলে তার দায়িত্বে থাকা মামলাগুলোর তদন্তভার অন্য কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। এতে করে সময়ের কিছুটা হেরফের হলেও মামলার তদন্ত কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় না।
নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর রোডের বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন। নিজের মালিকানাধীন ভবনের একজন ভাড়াটিয়ার সাথে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। মামলার নথি থানায় আসার পর একজন উপপরিদর্শককে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে দায়িত্ব পান আরেকজন কর্মকর্তা। তিনিও কিছুদিন পর বদলি হয়ে যান। এভাবে বদলিজনিত কারণে গত প্রায় নয় মাসে তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তার হাত ঘুরে সম্প্রতি ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার বাদী শাহাদত হোসেন বলেন, আমার মামলাটি খুবই সাধারণ শ্রেণির হলেও শুধুমাত্র দফায় দফায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে আমাকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসে তার নিজের মত করে আবার প্রথম থেকে মামলার তদন্ত শুরু করেন। মামলার প্রয়োজনীয় কিছু নথিপত্র আমাকে তিনজন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তিনবার করে জমা দিতে হয়েছে।
শাহাদাত হোসেনের মামলার মত এরকম আরও কয়েকটি থানায় কর্মকর্তাদের বদলিজনিত কারণে তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, বদলির পাশাপাশি গত ছয় মাসে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন কারণে থানা থেকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি সন্দিগ্ধ অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে দক্ষতার পরিচয় দেওয়া কর্মকর্তাও রয়েছে।
কোতোয়ালি থানার উপপদির্শক মো. রবিউল হক গত সাত মাসে নগরীর স্টেশন রোডে সাত বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা, আদালতের বারান্দা থেকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ ডকেট চুরি, ফলমন্ডিতে ৩০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টার মত চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। সর্বশেষ গত ১৮ জুন তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একজন বিচারকের বাসা থেকে মোবাইল ও ল্যাপটপসহ মূল্যবান মালামাল চুরির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি মো. সুজন মল্লিক (৩১) কে গ্রেপ্তার করেন। পরবর্তীতে ওই আসামি নিজের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন। এর ছয়দিন পর গত ২৪ জুন এসআই রবিউল হক থানায় গিয়ে জানতে পারেন, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে তাকে থানা থেকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তার মত চকবাজার ও বাকলিয়াসহ বিভিন্ন থানার আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।