মানুষের হৃদয়ে স্মরণীয় থাকবেন আব্দুল্লাহ আল নোমান

2

বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, নোমান ভাইয়ের কাছ থেকে শেখা অনেক রাজনৈতিক কৌশল ও আদর্শ আজ আমার মেয়র জীবনে বাস্তব প্রয়োগে আসছে। ওনার কাছ থেকেই আমি শিখেছি কিভাবে ধৈর্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে হয়। তিনি আমাকে পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন। আমি মেয়র হয়েছি, তার কাছ থেকে শেখা অনেক কৌশল, নরম নেতৃত্বের কৌশল এখন আমার কাজে লাগছে। আব্দুল্লাহ আল নোমান চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন। লাখো মানুষের হৃদয়ে তিনি জ্বলজ্বল করে জ্বলবেন। সবার কাছে অনুরোধ, উনার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। তিনি গতকাল সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির উদ্যোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মরহুম আব্দুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পিপলস ভিউ’র সম্পাদক ওসমান গণি মনসুরের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য শাহনেওয়াজ রিটনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সাঈদ আল নোমান।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৮৭ সালে নোমান ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। আমি তখন মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কিছু নবীন শিক্ষার্থী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল, কিন্তু বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছিল। ওরা আমার বাসায় এসে বারবার অনুরোধ করতো, দায়িত্ব নিতে। আপনাকে নোমান ভাইয়ের সঙ্গে একটু দেখা করতে হবে। তখন আমি বললাম, আমি তো উনাকে চিনি না ভালো করে। ওনার কাছে কিভাবে যাব? তখন তারা আমাকে বললো, চলেন একটা বাসা আছে, সেখানে আমরা কথা বলবো। গোলাম আকবর খোন্দকার ভাইয়ের বাসায় গেলাম। সেখানে নোমান ভাই, গোলাম আকবার ভাই এবং আমরা ছেলেরা কয়েকজন ছিলাম। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আমার ছাত্রদল নেতৃত্বের পথচলা।
চসিক মেয়র বলেন, মূলত ওইদিন থেকে নোমান ভাইয়ের সঙ্গে যেই সম্পর্কটা হয়ে গেছে, এ সম্পর্কটা প্রায় ৩৮ বছর।এই সম্পর্কের মধ্যে আমি কখনোই ওনাকে রাগান্বিত হতে দেখিনি। মেডিকেল কলেজে তখন খুব গন্ডগোল হতো। এমনও হয়েছে, নোমান ভাই অনেক সময় মেডিকেল কলেজের ছাত্র রাজনীতিতে আমরা ঠিকমতো মিছিল করছি কিনা, গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতেন। সন্ধ্যায় যখন পার্টি অফিসে যেতাম, তখন তিনি আমাকে বলতেন তোমাদের তো আজকে ১২ জনের মিছিল হয়েছে। আমি বললাম, আপনি কেমনে দেখেছেন, তখন তিনি বললেন আমি দেখেছি ওই গাছের নিচে আমি ছিলাম। তবে ওনাকে কখনো রাগতে দেখিনি। পরে তিনি আমাকে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সারগাম’ এরও আহব্বায়ক করে দেন।
নোমান অসাধারণ নার্সিং সক্ষমতা সম্পন্ন নেতা ছিলেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে একটা দলকে স্টাবলিশড করার জন্য তিনি (নোমান) নার্সিং করতেন। ওনি যেভাবে ছাত্রদলকে গড়ে তুলেছেন, নার্সিং করেছেন, তাতে ৯০ সালে এসে আমি দেখেছি, ক্ষমতায় আসার এক বছর আগে আমরা সংসদে ৪-৫টি আসন পেয়েছিলাম।
মেয়র শাহাদাত বলেন, যখন কোনো গÐগোল হতো, উনি বলতেন, বসো, ধৈর্য ধরো। এ রকম করতে করতে ওনি রাগ যে থাকে মানুষের সেটা আস্তে আস্তে ঠাÐা করে দেয়। সত্যিকারের রাজনীতিবিদ যারা তারা কিন্তু এ ধরনের আদর্শ রেখে গেছেন। এ জায়গায় আব্দুল্লাহ আল নোমান জ্বলজ্বল করে জ্বলবেন স্মৃতির পাতায়, লাখো কোটি মানুষের হৃদয়ে।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত। সব দলের মানুষের কাছে ছিলেন গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন সময়ে আমরা কোনো কোনো রাজনীতিবিদকে চট্টগ্রামের অভিভাবক হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আব্দুল্লাহ আল নোমান তেমন বড় মাপের নেতা, যিনি সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনে আসীন ছিলেন। তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না সামাজিক নেতাও ছিলেন। এসব কারণে আব্দুল্লাহ আল নোমান তাঁর সময়ে চট্টগ্রামের অভিভাবক স্থানীয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তার তুলনা তিনি নিজেই। তিনি যেমন ধীরস্থির, শান্তশিষ্ট, প্রজ্ঞাবান, যুক্তিবাদী ও দূরদর্শী নেতা ছিলেন, তেমনি ছিলেন অসাধারণ দক্ষ সংগঠক। সর্বদা হাস্যোজ্জল, ব্যক্তিত্বে অমায়িক, কথাবার্তায় বিনয়ী, চলাফেরায় ন¤্র ও শান্ত মেজাজের অধিকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান ছিলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ ও আলোকিত মানুষ। সুস্থ রাজনীতির অনুসরণ, অনুকরণ ও মনেপ্রাণে অন্তঃকরণের পর ছাত্রজীবন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির চর্চায় মনোনিবেশ করেছিলেন তিনি।
সাইদ আল নোমান বলেন, আমার পিতা আব্দুল্লাহ আল নোমান পাহাড়সম সমস্যাকে সমুদ্রের তরঙ্গের মতো, যোগ বিয়োগের মতো করে যেন সমাধান করে ফেলতেন। সমস্যা আসলে তিনি ভেঙে পড়তেন না, এগিয়ে যেতেন। তিনি আমাদের মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এই শিক্ষাটাই আমাদের জীবনে পথনির্দেশকের মতো কাজ করেছে। জননন্দিত হয়ে মৃত্যু পায় এমন মানুষ আমাদের সমাজে কম আছে। আমি গর্বিত যে, এমন একজন জননন্দিত মানুষের সন্তান আমি। তিনি তার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনায় সবার দোয়া কামনা করেন।
এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নীতিশ দেবনাথ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নছরুল কদির, বিএসএফএফের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. ছিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কে এম ফেরদৌস, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়–য়া, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি মুস্তফা নঈম, কবি ও নাট্যকার অভীক ওসমান, কোরান তেলোয়াত করেন সহকারী অধ্যাপক ওসমান গনি। খবর বিজ্ঞপ্তির