রোমেনা আফরোজ
শিল্প-সাহিত্যে বাঙালির পিছিয়ে পড়া এবং দুর্নীতির যে-ভয়াবহ চিত্র তা থেকে স্পষ্ট বোধগম্য হয়, তারা মানসিক বিবর্তনে পিছিয়ে আছে। শিশুকাল থেকে হরমোনের প্রভাবে তাদের বোধজগতের (চেতনা) কিছুটা পরিবর্তন হলেও যৌবনের আনন্দ যখন স্থিমিত হয়ে আসে, তখন তাদের জীবনও বুঝি থেমে যায়। বিদ্যমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ বস্তুজগত এবং ধারণার জগতের বিবর্তনের ভিন্নতা সম্পর্কে অবহিত নয়। তাই তারা শুধু বস্তুজগত নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং বস্তুজগতকেই একমাত্র সত্য বলে ধরে নেয়। এতে চিন্তাশক্তি ব্যাহত হয়। শিল্প-সাহিত্যের মতো ক্ষেত্রগুলোতে তৈরি হয় শূন্যতা। মূলত শরীরের বিবর্তন (বস্তুজগত) স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংগঠিত হলেও বোধের বিবর্তনের (ভাববাদ) জন্য সামাজিক সচেতনতা বা কনশাসনেসের (Social Consciousness) স্তর অতিক্রম করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘ সাধনা।
আঠারো সালের দিকে আমি যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন অনুধাবন করি, বস্তু দিয়ে সুস্থতা লাভ করা যায় না। বস্তু আকাঙ্ক্ষা বাড়ানোর সাথে সাথে সচেতনতাও নষ্ট করে। সেই থেকে আরম্ভ হয় নিজেকে জানার চেষ্টা। একসময় গতানুগতিক চিকিৎসাতে উপকার না পেয়ে বিকল্প পথ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি। এ সময় খেয়াল করেছি, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মনকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র শরীরের চিকিৎসা প্রদান করে। অথচ আমার মূল সমস্যা ছিল স্ট্রেস, যা মন এবং আত্মাকেন্দ্রিক।
১. মন এবং শরীর পরস্পর যুক্ত। তারপরেও মনকে বাদ দিয়ে শুধু শরীরকে আমলে নেওয়ার একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। মূলত মন এবং শরীরের বিচ্ছিন্নতা আরম্ভ হয়েছে সক্রেটিস এবং ডেমোক্রিটাসের সময় থেকে। মানুষের কোষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেই প্রাচীনকাল থেকে দু’টো মতবাদ প্রচলিত। এক মতবাদে সক্রেটিস বলেন, সোল বা আত্মা বাহির থেকে আসে এবং জীবন দেয়। তিনি আত্মার সাথে নৈতিকতার সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছেন। তার অনুসরণকারীদের বলা হয় আধ্যাত্মিক (Spiritualistic)। আরেক মতবাদে ডেমোক্রিটাস বলেন, কোষের নিয়ন্ত্রণ ভেতর থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি সবকিছুই পরমাণু দিয়ে গঠিত এই ধারণার উপর জোর দিয়েছেন। তার অনুসারীদের বলা হয় বস্তুবাদী (Materialistic)। এই বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মন এবং শরীরের বিচ্ছিন্নতার ভিত্তি আরম্ভ হয়েছিল। এরপর ষোড়শ শতাব্দীতে রেনেসাঁ (Renaissance) এবং সংস্কারের (Reformation) প্রভাবে ইউরোপীয় চিন্তাধারার পরিবর্তন হলে সেখানে মানবিকতা, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি নতুন ধারণার উদ্ভব হয়। এই দার্শনিক ¯্রােত মানুষকে ধর্মনিরপেক্ষতার (Secularism) দিকে পরিচালিত করে। পরবর্তী সময়ে রেনে ডেকার্ট শরীর এবং মনের যোগসূত্র স্থাপন করলেও আইজ্যাক নিউটন ডেমোক্রিটাসের ধারণার বশবর্তী হয়ে তাঁর সমীকরণে স্রষ্টা বা এনার্জিকে বাদ দিয়েছেন। সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে ধর্মনিরপেক্ষতা আরও ত্বরান্বিত হলে ভলতেয়ার, রুশো এবং জন লকের মতো চিন্তাবিদরা ব্যক্তির স্বায়ত্তশাসন, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং গির্জা ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। এ সময় রাজনীতিতে হ্রাস পেতে শুরু করে ধর্মের প্রভাব।
শিল্পবিপ্লবের পর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন হয়। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির উত্থানের সাথে সাথে ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে তৈরি হয় বিরুদ্ধতা। মানুষজন সবকিছুর জন্য প্রমাণভিত্তিক ব্যাখ্যা খুঁজতে শুরু করে। প্রবর্তন হয় পুঁজিবাদী শিক্ষাব্যবস্থা। এলিট শ্রেণি নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে শিক্ষাব্যবস্থা এবং সংস্কৃতিকে এমনভাবে আকার দেয়, যাতে সাধারণ জনগণ সচেতন হয়ে উঠতে না পারে। এর ফলে আঠারো শতকে যখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান মনকে বাতিল করে শুধু শরীরের চিকিৎসায় মনোযোগী হয়, তখন সাধারণ মানুষও অন্ধভাবে সেই পথ অনুসরণ করতে থাকে।
এখানে আমাদের বুঝতে হবে, এই মানব মেশিনের নিয়ন্ত্রণ শক্তি কোথা থেকে আসছে। চার্লস ডারউইন বলেছেন, এই নিয়ন্ত্রণ পিতামাতা থেকে সন্তানের মধ্যে প্রবাহিত হয়, যা মূলত ডিএনএ’র কথা বলে। এ থেকে মনে হতে পারে, পিতামাতার কাছ থেকে সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রে অসুখ-বিসুখ প্রাপ্ত হয়। কিন্তু ডক্টর ব্রুস লিপটন (Bruce H. Lipton, PhD, cell biologist, lecturer and writer) বলেছেন, মাত্র ১% এর চেয়েও কম অসুখ-বিসুখ জিনের কারণে হয়। ৯০% অসুখ-বিসুখ হয় স্ট্রেসের কারণে। তিনি আরও বলেন, সচেতন মন দ্বারা জিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বর্তমানে প্লাসিবো ইফেক্টও একই ধরনের কথা বলে থাকে। প্ল্যাসিবো হচ্ছে এমন এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে ঔষধের গুনাগুণ না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বিশ্বাসের জন্য রোগের উপর কাজ করে। Ralph Waldo Emerson (American essayist, lecturer, philosopher) বলেছেন, মানুষ মূলত তা’ই, যা সে চিন্তা করে। আসলে চিন্তাশক্তির এনার্জি মানুষের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।
গতানুগতিক ধারার বিজ্ঞান রিড্যাকশনিস্ট হলেও কোয়ান্টাম ফিজিক্স ১৯২৫ সাল থেকে অবহিত করেছে যে বিশ্ব এনার্জির তৈরি। বিজ্ঞানের এই শাখা ফোটন এবং প্রতিটি বস্তুর মধ্যে একপ্রকার মৌলিক এনার্জিও আবিষ্কার করেছে। তাই ম্যাটারের ক্ষেত্রে এক টুকরো নিয়ে অধ্যয়ন করা গেলেও মানুষের ক্ষেত্রে এনার্জিকে বাদ দেওয়া চলবে না।
সুফিবাদও বস্তুর বাহ্যিক (জাহেরি) এবং অভ্যন্তরীণ (বাতেনি) দু’টো দিক নিয়ে আলোচনা করেছে। তাছাড়া যুগযুগ ধরে দার্শনিকরা বিবেচনা করেছেন আত্মা ও মনকে। প্রতিটি সভ্যতায় জীবনযাপনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল আধ্যাত্মিকতা। মহাদেব ছিলেন ধ্যানের আদিগুরু। গৌতম বুদ্ধ ছয় বছর ধ্যান করেছেন। রাসুল (সা.) ধ্যান করতেন হেরা গুহায়। তাই একবাক্যে আধ্যাত্মিকতাকে বাতিল করা অনুচিত। এই ধ্যানের মূল উদ্দেশ্য হলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাত্রা বা বিবর্তন। দেহের জন্য যেমন খাদ্য প্রয়োজন তেমনি মনের জন্য প্রয়োজন আধ্যাত্মিকতা।
২. আমার ধারণা, প্রকৃতি মানুষকে বিভিন্নভাবে সচেতন করতে চায়। এই বিষয়টা প্রথম লক্ষ করেছি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়। সে-সময় একদিন খেয়াল করলাম, মাথার ভেতর কেউ একজন কথা বলছে। ঘটনাটা আমাকে ভীত এবং শঙ্কিত করে তুললো। বোঝার চেষ্টা করলাম, বিষয়টা কি শুধু আমার সাথেই ঘটছে, নাকি এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতদিনে জেনেছি, সেই নেপথ্যে কথা বলা অংশটি আর কেউ নয়, আমার মন। আমার ধারণা, যেসব মানুষ সচেতন হতে ব্যর্থ হয়, তারা সাধারণ জীবনযাপন করে। কিন্তু যারা সচেতনতার স্তরগুলো অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখে প্রকৃতি তাদেরকে আরও কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দেয়।
এর কারণ, প্রতিটি বস্তুর মতো সমাজেরও বিবর্তন আছে। এই বিবর্তন অব্যাহত রাখার জন্য শ্রেণিভিত্তিক মানুষজন (যেমন শিক্ষক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ইত্যাদি) প্রয়োজন। তাই প্রকৃতি মানুষকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সচেতন করে, বিবর্তনকে অব্যাহত রাখতে চায়।
প্লেটোর মতো আমারও ধারণা ‘সব জ্ঞানই সুপ্ত’। কিন্তু তারপরেও কেন পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ অসচেতন বা আনকনশাস (ব্রুস লিপটনের বক্তব্য অনুযায়ী, মাত্র ৫% মানুষ সচেতন) সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন? বস্তুত সহজাত জ্ঞান বিভিন্ন পরিস্থিতিতে(আধ্যাত্মিক জ্ঞানচর্চা) অচেতন (আনকনশাস) মন থেকে অবচেতন (সাবকনশাস) মনে, এরপর সচেতন মনে জাগ্রত হয়। যেহেতু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আধ্যাত্মিকতাকে বাদ দিয়ে বস্তুবাদ বা ক্যারিয়ারকে (পেশা) কেন্দ্রবিন্দু করেছে, তাই মানুষ সচেতন হয়ে উঠতে পারছে না।
৩. ছোটবেলায় স্কুলে ভর্তি হওয়ার পূর্বে, মা, দাদিদের দেখে বেশ অনুধাবন করেছিলাম, গৃহিণী হওয়া সুখের কিছু নয়। তাই মাথার মধ্যে ভিন্নধর্মী ভাবনা কাজ করতো। ছোটবেলা থেকে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠে আকাশ এবং প্রকৃতির সাথে। ব্ল্যাকহোলের গল্প শুনতে শুনতে স্পেসে যাওয়ার ইচ্ছেও জাগ্রত হয়। সেই স্বপ্নগুলোই কি বর্তমানে ঢেউ তুলছে? নতুবা যার এইচএসসি’র বিষয় ছিল ফাইন আর্টস, যে-নারী শারীরিক অসুস্থতায় মরতে বসেছিল, সে কী করে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মতো বিষয় নিয়ে মেতে উঠে? এতদিনে জেনেছি, ছোটবেলায় অবচেতন মনে স্বপ্নের যে-বীজ বুনে দেওয়া হয়, তা’ই একসময় মহীরুহ হয়ে বাস্তবতা লাভ করে।
বাল্যকালে আমার মধ্যে সচেতনতার অনুরণন থাকলেও বিবাহিত জীবনে বিভিন্ন কারণে তা হ্রাস পেয়েছিল। আমি ধর্মীয় আচার-আচরণ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। বইয়ের জগত ছেড়ে প্রবেশ করেছিলাম বস্তুজগতে। একসময় আমি হয়ে উঠেছিলাম মায়ের প্রতিচ্ছবি। সাধারণ বাঙালি নারীর মতো সংসার হয়ে উঠেছিল আমার স্বপ্ন। ঐ সময় মনে হতো, একটা চাকরি পেলে জীবনের পুলসিরাত পার হয়ে যেতে পারতাম। ফলে বস্তুবাদী চেতনায় নিমজ্জিত হয়ে চাকরিকে লক্ষ্যবস্তু ভেবেছি। পরবর্তীকালে দর্শন নিয়ে পড়ার সময় বস্তুবাদী চিন্তা-ভাবনা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এরপর মনে হয়েছে, জ্ঞানার্জনই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু গভীরভাবে বিবেচনা করলে স্পষ্ট হয়, জ্ঞানার্জন একটা মাধ্যম মাত্র। কোথাও যাবার জন্য যেমন যানবাহনের প্রয়োজন হয়, এটাও তেমন একটা মাধ্যম। এ সময় অনুভব করেছি, যেহেতু ধন-সম্পদ, ক্ষমতার মতো বস্তুবাদী আকাক্সক্ষাগুলো মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করে, শ্রেণিবৈষম্য বাড়ায়, তাই জীবনের লক্ষ্য এমন কিছু হতে হবে, যাতে মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ তৈরি না হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে জাগতিক কোনো আশা-আকাক্সক্ষাকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে মেলাতে পারছিলাম না। একসময় জানলাম, সচেতনতার দীর্ঘ স্তর আছে। এই স্তরগুলো জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অতিক্রম করতে হয়, সেই থেকে মনে হচ্ছে জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত, সচেতন হওয়া। একমাত্র সচেতনতার মাধ্যমে শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব। কিন্তু বিবর্তনের ইতিহাস ঘাঁটলে বোঝা যায়, এটা একটা ইউটোপিয়ান (কাল্পনিক) স্বপ্ন মাত্র।
যদিও আঠারো সাল থেকে আধ্যাত্মিকতা, প্রাকৃতিক চিকিৎসা গ্রহণের ফলে আমার শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছিল, কিন্তু মাঝেমধ্যেই স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। আমি বাইশ সাল থেকে দীর্ঘদিন গ্রামে অবস্থান করেছিলাম। এই সময় খেয়াল করলাম, প্রকৃতির মধ্যে বসবাস করলে স্ট্রেস তেমনভাবে কাজ করে না। কিন্তু শহরে থাকলে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। আসলে মানুষের সাথে প্রকৃতির গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। মানুষ শুধু তার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে না, বরং প্রকৃতি এনডরফিন, ডোপামিন উৎপাদনও বাড়িয়ে দেয়, যা বøাড প্রেশার এবং কর্টিসল লেভেলকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতিতে বাস করলে, এমনকি প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী দেখলেও মানুষের রাগ এবং ভয়ের অনুভূতি কমে যায়।
প্রকৃতির মতো মানুষের জীবনে নীরবতাও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমরা বিষয়টা অনুধাবন করতে পারি না। একমাত্র নিরবতার মধ্য দিয়ে মানুষ আত্মজগতে প্রবেশ করতে পারে। নৈঃশব্দ্যের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় নিজেকে, জন্ম হয় গভীর চেতনার। এই বিষয়টা প্রথম অনুভব করেছি, তেইশ সালে উমরাহ করতে যেয়ে।
সাধারণত মক্কায় হজ্জ এবং উমরার সময় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। রোজার মাসে সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ কারণে আমার পক্ষে নিরিবিলি ধ্যান এবং অশ্রু বিসর্জন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মক্কার আচার-অনুষ্ঠান পালন করার পরেও মনে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তৈরি হয়েছিল হতাশা। তাই চূড়ান্ত আক্ষেপ নিয়ে মদিনার পথে পা রেখেছি। পথিমধ্যে যে-পাহাড়গুলো দেখেছি, সেগুলো চুম্বকের মতো টানছিল। মনে হচ্ছিলো, এক দৌড়ে হারিয়ে যাই পাহাড়ে, সমর্পণ করি নিজেকে। আমার মনে হয়, ধ্যানের জন্য নৈঃশব্দ্যতা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এজন্যই তাহাজ্জুদ নামাজকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজকাল মানুষ একাকীত্ব, নীরবতা, শূন্যতা, নৈঃশব্দ্যতা ইত্যাদি পরিস্থিতিকে ভয় পায়। অথচ চিন্তাশক্তি গঠনের জন্য এই বিষয়গুলো রপ্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট