মাহমুুদুল হক আনসারী
জনগণের মধ্যে মানবাধিকার চর্চা ্ও বাস্তবায়ন বর্তমান সময়ে খুবই নাযুক পর্যায়ে। মানবাধিকার বলতে যা বুঝা দরকার তা হলো জনগণের অধিকার, ব্যক্তি অধিকার, প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার, কথা বলার অধিকার, লেখার অধিকার, স্বাধিন ভাবে চলাফেরার অধিকার, সবা সমাবেশ করার অধিকার, মুক্ত মতামত ব্যক্ত করার অধিকার। এগুলো নিয়েই একজন মানুষ তার ব্যাক্তি পরিবার সামাজিক জীবন পরিচালনা করে। ব্যক্তি যদি তার মতামত তুলে ধরতে না পারে তাহলে সেটি মানবাধিকার পরিপন্থি। বাংলাদেশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ৭১ সালে স্বাধিন হয়েছে। কথা বলার জন্য মতামত স্বাধিন ভাবে উপস্থাপন করার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ ্ও মুক্ত পরিবেশ ভোগ করার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ৫৪ বছরের বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে কতিপয় দল ব্যাক্তি দেশ ও জনগণকে শাসন করেছে। তাদের শাসনামলে জনগণের মৌলিক অধিকার গণতন্ত্র ভোটাধিকার মানবাধিকার যথেষ্ট ক্ষুন্ন হয়েছে। দুর্বলের উপর সবলের শাসন, শোষন, অত্যাচার, নির্যাতন, মানবাধিকার লংঘন দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে যেভাবে চলছে বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। ৫৪ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশে দেশের জনগণ মানবাধিকার, পরিচ্ছন্ন ভোটাধিকার, মৌলিক অধিকার, পায়নি। স্বাধিনতার এই বয়সে বাংলাদেশের জনগণ নেতা পেয়েছে, দল পেয়েছে, শাসন দেখেছে, শোষিত হয়েছে। পক্ষান্তরে জনগণের নাগরিক অধিকার ব্যপক ভাবে খর্ব হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের সাথে জনগণের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের প্রতিশ্রুতির মিল প্ওায়া যাবে না। এই বয়সে বাংলাদেশে যারা রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছে তারা শত শত হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ সম্পদের অধিকারি হয়েছে। প্রায় ১৮ থেকে ২০ কোটি জনগণের এই বাংলাদেশ। এখানে যারাই রাজনীতির ব্যবসার সাথে দলকে এগিয়ে নিতে পেরেছে, এমপি মন্ত্রি রাজনৈতিক দলের পদ পদবি অর্জন করেছে। কেন্দ্র থেকে ্ওয়ার্ড পর্যন্ত তারাই বিশাল ভাবে অর্থনীতিতে ধনাঢ্য হয়েছে। প্রকৃত পক্ষেই জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা তাদের সংবিধানে লেখা হলেও বাস্তবে প্রতিশ্রুতি কোনো দলই বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। ক্ষমতায় যারা ছিল আর বাইরে যারা চেয়ারে য্ওায়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রামে ব্যস্ত সকলেই ভাগাভাগি করে ক্ষমতায় আর বাইরে এভাবেই বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণকে শোষন করেছে। তাদের বাইরে নির্দিষ্ট পরিমানে কিছু সংখ্যক আমল্ওা রয়েছে।
রাজনীতির ছত্র ছায়ায় ব্যবহার হয়ে দুর্নিতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ সম্পদ লুটপাট করেছে। ইউনিয়ন পরিষদের একজন কম্পিউটার অপারেটরও কোটি টাকার দুর্নীতিতে পৌঁছেছে। স্বাধিনতার পর আজকের তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশটি দুনিয়ার অপরাপর দেশ থেকে একটি ভিন্ন চরিত্রে বেড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের পাশর্^বর্তী দেশে মহামারি আকারে দুর্নীতির অগ্রগতি না হল্ওে বাংলাদেশ কিন্তু দুর্নীতির শীর্ষ পর্যায়ে পৌছতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি একটি লাভজনক বাণিজ্য।
গণতান্ত্রিক রাজনীতি জাতীয়তাবাদি দল, ধর্মীয় রাজনীতি, ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি, বৈষম্যহীন রাজনীতি এক একটি ¯েøাগান। বাস্তবে দলের সংবিধান গঠনতন্ত্র কর্মসূচি গণতান্ত্রিক বক্তব্যের সাথে দলের নেতাকর্মীদের বাস্তবতার জীবনের সাথে মিল খুজে পাওয়া যাবে না। কথার সাথে কাজ ও কর্মসূচির মিল নেই, আদর্শের মিল নেই। ছোট বড় রাজনৈতিক দল বিদেশি দূতাবাসের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা থাকে। বহু রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মিদের আয়ের উৎস না থাকলেও তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন খরচ ব্যক্তি পরিবার দৈনন্দিন জীবনের খরচ দেখলে মনে হয় তিনি একজন শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ি। যদি রাজনৈতিক দলের আয়ের উৎস ঠিক না হয় তাহলে তিনি রাজনীতিতে এত অর্থ কোথা থেকে পান? আয়ের উৎস কী? তাদের যদি আয়ের ্উৎস না থাকে জনগণের জন্য তাদের দেওয়ার মতো কী থাকবে। আর যদি যেকোনো ভাবে ক্ষমতায় পৌছে যায় আর কথা নেই। রাতারাতি বস্তায় বস্তায় টাকার মালিক হয়ে গেলো। এই যদি বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চার চরিত্র হয়, তাহলে কোনো কালেও বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি থেকে সুফল পাবে না। রাজনৈতিক দলকে সার্বজনীন হতে হবে। ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে তাদের রাজনৈতিক চিন্তা সবার জন্য সমান হতে হবে। দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, মহামারি যেকোনো পরিস্থিতিতে সব মানুষের পাশে নির্দলীয় ভাবে পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা রাজনৈতিক দলের মধ্যে চিন্তা চেতনায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে থাকতে হবে। কিন্তু ৫৪ বছরের বাংলাদেশে সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা হয়নি। দলীয় ভাবে পক্ষপাতিত্ব একচোখা নিতী আদর্শের উপর পরিচালিত রাজনীতিতে দেশ এখনো চলছে। রাজনৈতিক দলে দলে বিভাজন, মতপার্থক্য দলের মধ্যে কোন দল পদ পদবির জন্য দলেই বিশৃঙ্খলার ধ্ওায়া পাল্টা মারামারি ভাঙ্গচুর এদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির চলমান চরিত্র। পদ পদবি না পেলেই সেখানেই উশৃঙ্খলা। তাহলে বুঝতে হবে মুলত রাজনীতি হচ্ছে একটি ব্যবসা। যদি তাই হয় তাহলে দলের বাইরে থাকা জনগণের দুঃখ দুর্দশা মৌলিক অধিকার মানবাধিকার নাগরিক অধিকার সব সময় নিগৃহিত থাকবে। আগে করতে হবে রাজনৈতিক দলের চিন্তার চেতনার কর্মসূচির সংস্কার দলের মধ্যে দেশ প্রেমিক মানবাধিকার গণতন্ত্র শৃঙ্খলা চারিত্রিক পরিবর্তন আনতে হবে। এদেশের জনগণ রাজনীতির শাসনে শোষণ হতে হতে প্রচলিত রাজনীতির নেতৃত্ব থেকেই আস্তা হারিয়ে ফেলেছে।
রাজনৈতিক দল ও নেতাকে জনগণের মধ্যে আস্তা ফিরিয়ে আনতে হবে। কারচুপির ভোট মানবাধিকার লংঘন ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধিন ভাবে মত প্রকাশের নিশ্চয়ত দিতে হবে। সাংবাধিক লেখক প্রকাশনাকে কোনো ধরনের আইন চাপিয়ে দিয়ে মত প্রকাশে বাধা দেয়া যাবে না। রাষ্ট্রের অথন্দ্র চিন্তার প্রতিফলন প্রকাশনাকে রাষ্ট্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বদা সহযোগিতা করতে হবে। সংবাদ পত্রের অবাধ স্বাধিনতা ও তাদের রাষ্ট্রিয় সাহায্য সহযোগিতা নির্দলীয় ভাবে প্রদান করতে হবে। গণতন্ত্র, রাজনীতি, মানবাধিকার, ভোট, পরিচ্ছন্ন নির্বাচন, অনুষ্ঠানের জন্য বর্তমান সরকারকে ধৈর্য বিচক্ষণতার মাধ্যমে কোনো পক্ষের পক্ষপাতিত্ব জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারকে বৈষম্য বিরোধি ছাত্র জনতা যেই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব দিয়েছে সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জন স্বার্থে পরিচ্ছন্ন ভাবে দেশাত্মবোধ নাগরিক হিসেবে পালন করতে হবে। জনগণ কোনো দলের চাপের মুখে অতিতের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আশা করেনা। মানবাধিকার, পরিচ্ছন্ন ভোটার তালিকা, সীমানা নির্ধারন, পেশী শক্তি, কালো ও দুর্নীতির টাকার প্রতিরোধমুক্ত নির্বাচন প্রত্যাশা করে সাধারণ জনগণ।
লেখক : সংগঠক, গবেষক, কলামিষ্ট