মানবপাচার অভাবপীড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য একটি ভয়াবহ সমস্যা। বিশ্বের বহু দেশের দরিদ্র সাধারণ মানুষ ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষে বিশ্বের অপেক্ষাকৃত সচ্ছল দেশে পাড়ি জমাতে চায়। তৎমধ্যে বাংলাদেশের বহু সহজ সরল দরিদ্র মানুষ সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশ যেতে যেপরিমাণ অর্থ খরচ হয় তা জোগাড় করতে পারে না। বৈধভাবে বিদেশ যাবার বিষয়ে অপারগ মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে অবৈধ মানব পাচারকারীরা সাধারণ মানুষদের নিকট হতে অপেক্ষাকৃত কম খরচ দেখিয়ে সমুদ্রপথে মানবপাচার করে চলেছে। কেউ কেউ পাচারকারীদের মাধ্যে বিদেশ যেতে পারলেও অধিকাংশ মানুষ প্রতারণার শিকার হয়। অবৈধ মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে অনেকে বিদেশে জেল-জুলুমের শিকার হয়। আবার কারো কারো ভাগ্যে সমুদ্রে সলীল সমাধি নিশ্চিত হতে দেখা যায়। দেশে অবৈধ মানবপাচারকারীদের যে নেটওয়ার্ক আছে তা সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অজানা নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতার সাথে দায়িত্ব পালন করলে দেশে মানবপাচার বন্ধ করা অসম্ভব নয়। কিন্তু কক্সবাজার সীমান্তে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে সমুদ্র পথে মানবপাচারের খবর বারবার পত্রিকার পাতায় আসে। নিরীহ বিদেশগামী সাধারণ নর-নারী শিশু ধরা পড়ে পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বিভিন্ন পাচারকারীদের ক্যাম্পে অথচ পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। পাচারকারী চক্রের কেউ ধরা পড়লেও তাদের শাস্তির খবর খুব একটা হতে দেখা যায় না। এতে বোঝা যায় ‘ডালমে কুচ কালাহে।’ সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে খুব একটা দায়বদ্ধতার পরিচয় রাখতে পারছে না। এব্যাপারে সরকারকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় – কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার গহীন পাহাড়ে ‘গোপন বন্দিশালা’ থেকে নারী ও শিশুসহ ৪৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে; যাদের মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশে জড়ো করা হয়েছিল বলে ভাষ্য কোস্ট গার্ডের। বৃহস্পতিবার রাতভর উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পিনিসভাঙ্গা এলাকার গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। ইতোপূর্বে এমন খবর আরো বহুবার পত্রিকান্তরে দেখা গেছে। এবার যথারীতি পাচারকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার বিকালে কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের টেকনাফ বিসিজি স্টেশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্টেশনটির কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. সালাহউদ্দিন রশীদ তানভীর।
তিনি বলেন, মধ্যরাতে গহীন পাহাড়ের গোপন বন্দিশালায় সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশে নারী ও শিশুসহ কিছু লোকজনকে জড়ো করার খবর পায় কোস্ট গার্ড। পরে রাত ২টা থেকে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত সেখানে অভিযান চালানো হয়। তবে কোস্ট গার্ড সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে সাত থেকে আটজন লোক কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে পাহাড়ের চ‚ড়ায় পাচারকারীদের ‘গোপন আস্তানায়’ বন্দি থাকা নারী ও শিশুসহ ৪৪ জনকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাহউদ্দিন রশীদ তানভীর। তিনি বলেন, সাগরপথে মানবপাচারে জড়িত কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় রয়েছে। যারা বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরি, সুবিধাজনক কর্মসংস্থান, উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন, অল্প খরচে বিদেশ যাত্রা এবং বিনা অর্থে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশি নাগরিকদেরও জড়ো করতেন। পরে পাচারকারীরা তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করতেন। উদ্ধার হওয়াদের স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠাতে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান কোস্ট গার্ডের এ কর্মকর্তা। গেল দুই মাসে বিভিন্ন সময় উপজেলার গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ১৮৬ জনকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।
আমরা মনে করি দায়সারা এসকল বক্তব্যের মাধ্যমে মানবপাচারের নামে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি সরল মানুষ পাচারকারীদের হাত হতে রক্ষা পবে না। যতদিন সংশ্লিষ্টরা সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং দায়বদ্ধতার সাথে মানবপাচার বন্ধ করতে কাজ করবে না ততদিন কক্সবাজার সীমান্ত রোটে মানবপাচার বন্ধ হবে না। জনগণকে নারী শিশু উদ্ধারের গল্প না শুনিয়ে সত্যিকার অর্থে কোস্টগার্ড মানবপাচার বন্ধে নিষ্ঠার সাথে কাজ করুক তাই কামনা দেশবাসীর।











