লায়ন ডা. বরুণ কুমার আচার্য
বাংলাদেশের প্রবর্তিত একমাত্র তরিকা, তরিকায়ে মাইজভান্ডারীয়ার মহান প্রবর্তক আহলে বাইতে রাসূল, ইমামুল আউলিয়া, খাদেমুল অলদ, গাউসুল আযম, হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.)’র অন্যতম খলিফা, ফানাফিল্লাহ বাকাবিল্লা, মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ রিজুয়ান উদ্দীন মাইজভান্ডারী (রহ.) প্রকাশ শাহনগরী কেবলা। আল্লামা রিজুয়ান উদ্দীন শাহনগরী (রহ.) ১৮৫৩ খৃষ্টাব্দ ফটিকছড়ি উপজেলা ১৩নং লেলাং ইউনিয়ন শাহনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁহার পিতার নাম মাওলানা আব্দুল করিম, মাওলানা আব্দুল করিম ছিলেন একজন আলেম এবং কামেল আউলিয়া যাঁহার অসংখ্য কেরামত রয়েছে, আল্লামা শাহনগরীর পূর্বপুরুষ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর আরব থেকে চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি আব্দুল্লাহপুর বসবাস শুরু করেন পরর্বতীতে আল্লামা শাহনগরী পূর্বপুরুষ শাহনগর গ্রামে বসবাস স্থাপন করেন, আল্লামা রিজুয়ান উদ্দীন শাহনগরী গ্রামে শৈশবে ও প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন, পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন, কোলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ ডিগ্রি এবং গোল্ডমেডেলিস্ট অর্জন করেন, পড়ালেখা শেষ করে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য হুজুর গাউসুল আযম, হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) হাতে বায়াত গ্রহণ করে বেলায়ত অর্জন করেন এবং কঠোর রিয়াজতে মশগুল থাকেন, তিনি দুনিয়াবী লোভ-লালসা ত্যাগ করে খোদার প্রেমে এতটা মগ্ন হয়েছিলেন উনার নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে হাটহাজারী থানার অন্তর্গত ফরহাদাবাদ ও শফিনগর এলাকায় রিয়াজতের মাধ্যমে উঁনার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন, উঁনি কঠিন সাধনা করেন এবং তাঁহান পীর হুজুর গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) এবং পরবর্তীতে ইউসুফে-সানী হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী প্রকাশ বাবা ভান্ডারী (ক.)’র থেকে বেলায়তের অর্জন করে বেলায়তের উচ্চ মোকামে গিয়ে পৌঁছেন, উনার বেলায়তের মোকাম এত উঁচু ছিলো যে যখন আল্লামা শাহনগরী বাবা ভান্ডারী (ক.) হুজরা শরিফে প্রবেশ করতেন তখন বাবা ভান্ডারী (ক.) আল্লামা শাহনগরীকে দাঁড়িয়ে সম্মান করতেন এবং হুক্কা মোবারক গ্রহণ করার জন্য আরজ করতেন কিন্তু আল্লামা শাহনগরী বাবা ভান্ডারীর হুক্কা মোবারকে সম্মান প্রদর্শন (চুমু দিয়ে) বাবা ভান্ডারীকে বলতে ‘আপনি হচ্ছেন সুলতানের সুলতান আর আমি হচ্ছি গোলামের গোলাম’ এই কথা বলে বাবা ভান্ডারী (ক.) থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসতেন। আল্লামা শাহনগরীর শান বর্ণনা করতে গিয়ে খলিফায়ে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী হযরত মাওলানা মোছহাব উদ্দীন শাহপুরী (রহ.) বলেন- ‘মাননীয় শাহনগরী আউলিয়ার প্রধান, উলমা দপ্তরে আর গৌরব তাঁহান’ (রত্নভান্ডার) আল্লামা শাহনগরী (রহ.) দীর্ঘদিন আল্লাহর রিয়াজতে কঠোর সাধনার মাধমে অতিবাহিত করেন উঁনার সাথে অসংখ্য আউলিয়া কেরাম চলাফেরা করতেন তারমধ্যে খলিফায়ে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী (রহ.), মাওলানা রহম আলী (রহ.), মাওলানা করম আলী (রহ.) মাওলানা আব্দুল হাদী কাঞ্চনপুরী (রহ.) সহ অসংখ্য আউলিয়া কেরাম ছিলেন। লোকমুখে আল্লামা শাহনগরীর অসংখ্য কেরামত শুনা যায় তার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, ফটিকছড়ি সিনিয়র মাদ্রাসার সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা আমিনুল্লাহ সুন্দরপুরী (রহ.) একদিন ভক্তবৃন্দসহ কোন এক মাহফিল থেকে আসার সময় পথমধ্যে আল্লামা শাহনগরী দাঁড়িয়ে রইলেন মাওলানা আমিনুল্লাহ সুন্দরপুরী কাছাকাছি আসলে আল্লামা শাহনগরী সুন্দরপুরী কে উদ্দেশ্য করে বলেন মওলানা সাহেব আমার পায়খানার হাজত হয়েছে আমার জন্য পানি নিয়ে আসেন এই কথা বলে আল্লামা শাহনগরী জঙ্গলের ভিতর ঢুকে গেলেন, মাওলানা সুন্দরপুরী পানি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলেন আল্লামা শাহনগরী হাজত শেষ হওয়ার পর মাওলানা সুন্দরপুরী নিজ হাত দিয়ে আল্লামা শাহনগরীকে পরিস্কার করে দেন, মাওলানা সুন্দরপুরী যখন আল্লামা শাহনগরী থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন পিছনে থাকা এক ভক্ত বলে উঠলেন হুজুর আপনি এই পাগল লোকটাকে কেন পানি দিয়ে পরিস্কার করে দিলেন?
ভক্তের কথার উত্তরে মাওলানা সুন্দরপুরী বললেন উনাকে চুপ থাকতে কিন্তু ততক্ষণে আল্লামা শাহনগরী সামনে এসে বলে উঠলেন মাওলানা সাহেব ‘মানুষ পায়খানা করলেও মরে না করলেও মরে” সুন্দরপুরী তার ভক্তকে বললেন তোমাকে আর বাঁচাতে পারলাম না সেই রাতে লোকটি পায়খানা বন্ধ হয়ে মারা যায়।
আল্লামা শাহনগরী নিকট অসংখ্য আলেম উলমা আসা-যাওয়ার করতেন যারা শাহনগরী থেকে বেলায়ত অর্জন করে কামেল আউলিয়া হয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখ মাওলানা আমিন ফকির (রহ.) গোপালঘাটা, মাওলানা আব্দুল গফুর শাহ (রহ.) ফটিকছড়ি, মাওলানা মকবুল শাহ (রহ.) গোপালঘাটা, মাওলানা আমিনুল্লাহ সুন্দরপুরী (রহ.) ফটিকছড়ি সহ অনেকেই রয়েছে। এই মহান জাতেপাক ১০ আশ্বিন ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯২৮ খৃষ্টাব্দ ৭৫বছর বয়সে ওফাত বরন করেন। প্রতি বছর ১৫ মাঘ ২৯ জানুয়ারি হুজুর গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী (ক.) উরশ এবং আল্লামা শাহনগরীর বেলাদত ও বেলায়ত বার্ষিকী উরশ শরিফ ও ১০ আশ্বিন বার্ষিক ওরশ শরিফ মহাসমারোহে শাহনগরীর রওজামোবারক প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও ধর্মীয় গবেষক