চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম বলেছেন, সীতাকুন্ডের বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটিয়ারী ও অন্যান্য স্থান অবরোধ করে রাখে। মহাসড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তি কারও কাম্য নয়। শিল্প-কারখানার সমস্যার কারণে ভবিষ্যতে কেউ যাতে মহাসড়ক অবরোধ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক নগরীর হাজারী গলিতে সংঘটিত ঘটনার ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে মিটিং করে সমস্যা সমাধান করতে চাই। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আটককৃত অনিবন্ধিত গ্রাম সিএনজি ও ডকুমেন্ট মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন গাড়ি ডাম্পিং করতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও মিরসরবাই উপজেলার কোন জায়গায় ডাম্পিং স্টেশন করা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ জায়গা খুঁজে জেলা প্রশাসনের কাছে তালিকা দিলে তা যাচাই-বাছাই করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করলে একটি চমৎকার জেলা প্রশাসন উপহার দিতে পারবো।
গতকাল রবিবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গত মাসের খাতওয়ারী অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক।
জেলা প্রশাসক বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বালি উত্তোলন, পাহাড় কাটা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, নারী ও শিশু নির্যাতন, রেল থেকে তেল পাচার, রেলপথ, নৌ-পথ ও সড়ক পথে মাদক পাচার রোধ, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ এবং বন্যহাতির উপদ্রব থেকে জানমাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
সভায় জেলার নবাগত পুলিশ সুপার (এসপি) রায়হান উদ্দিন খান বলেন, জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। থানাগুলোকে ঢেলে সাজিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের নির্দেশনা মতে পুলিশ কাজ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুÐসহ অন্যান্য অংশে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই রোধে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
এসপি বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী থেকে জেলার বিভিন্ন থানা থেকে বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুঠ হয়েছে, কিছু কিছু উদ্ধার হয়েছে, যে সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনও উদ্ধার হয়নি, সেগুলো উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর বাহিনীর অভিযান আরও জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন দেশের ৬৩ জেলা ও মহানগর পর্যায়ে যারা নাশকতা ও হামলা চালিয়েছে তাদের মধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে সর্বাধিক ১ থেকে ৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। সঠিক ঘটনায় থানায় মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করবে না। তবে যারা ঘটনার সাথে জড়িত নয়, তাদেরকে মামলায় যুক্ত না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
সভায় জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩০৪ জন, আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৩২ জন, চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৪৭ জন ও গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত ছিল ১ হাজার ৪৩০ জন, মৃত্যুবরণ করেছে ৯ জন এবং চলতি মাসের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত ৩৬৯ জন ও মৃত্যুবরণ করেছে ৭ জন।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রায়হান উদ্দিন খান, সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সৈয়দ মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাদি-উর রহিম জাদিদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন, মেট্রো এনএসআই’র উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ, র্যাব-৭ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল, কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের প্রতিনিধি লে. শাকিব মেহবুব, জেলা এনএসআই’র সহকারী মো. রেজাউল করিম, আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট মো. আবু সোলায়মান, ৪৩ বিজিবি’র প্রতিনিধি সুবেদার মো. মশিউর রহমান, ৮ বিজিবি’র প্রতিনিধি নায়েক সুবেদার মো. মুনছুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী (ফটিকছড়ি), এবিএম মশিউজ্জামান (হাটহাজারী), হিমাদ্রী খীসা (বোয়ালখালী), মাহফুজা জেরিন (মিরসরাই), রিগ্যান চাকমা (স›দ্বীপ), কে.এম রফিকুল ইসলাম (সীতাকুন্ড), আলাউদ্দিন ভূইয়া জনী (পটিয়া), রাজীব হোসেন (চন্দনাইশ), মিল্টন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), জেসমিন আক্তার (বাঁশখালী), মাসুমা জান্নাত (কর্ণফুলি), অংগাজাই মারমা (রাউজান), মিল্টন বিশ্বাস (সাতকানিয়া), ইশতিয়াক ইমন (আনোয়ারা), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির খোন্দকার, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী, মহানগর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক মো. রফিকুল্লাহ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি