কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম
মহানবী হজরত মুহম্মাদ (সা.) ছিলেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য এক অনুপম আদর্শ। তিনি ছিলেন শিশু, যুবক, সৈনিক, সেনাপতি, স্বামী, পিতা, নানা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও রাষ্ট্রনায়কের আদর্শ। পৃথিবীর অন্যকোনো মহামানবের ভেতরে এমন অপুর্ব দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে না, যা শুধু এই মহামানবের জীবনাদর্শেই বিদ্যমান। তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ করার মধ্যেই রয়েছে মানব জীবনের ঐকান্তিক সফলতা এবং মুক্তি। রাসুল (সা.) ছিলেন সৃষ্টির সেরা মানুষ। নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকরাও অকপটে স্বীকার করেছেন যে মুহাম্মাদ (সা.) সর্ব কালের সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নৈতিক চরিত্রের মান নিয়ে মক্কার মুশরিকদেরও অভিযোগ ছিল না। তাঁর বিশ্বস্ততা ও উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তাদের ছিল না কোনো দ্বিমত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নৈতিক চরিত্রের সর্বোত্তম সংজ্ঞা দিয়ে হজরত আয়েশা (রা.)। তিনি বলেছেন, ‘কোরআনই ছিলো তাঁর চরিত্র।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার তাবৎ মানুষের সামনে শুধু কোরআনের শিক্ষাই পেশ করেননি। বরং তিনি নিজেকে কোরআনের জীবন্ত নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। কুরআন মজিদে যে নৈতিক গুণাবলীকে উৎকৃষ্ট কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব গুণে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ ও গুণান্বিত।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) অন্ধকারে নিমজ্জিত বর্বর একটি জাতিকে সারা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জাতিতে পরিণত করেছিলেন। তাঁর পরশ পেয়ে খাঁটি হয়েছিল আরবের মানুষগুলো। শত-সহ¯্র বাধা-বিপত্তিকে ডিঙিয়ে তিনি তাঁর মিশনকে সফল করতে পেরেছিলেন। কোন লোভ, লালসা, ভয়ভীতি তাঁকে ইসলাম প্রচারের পথ থেকে এতটুকু সরাতে পারেনি। মানবজাতিকে সঠিক পথের দিকে আহবান করেছেন জীবনভর। মানুষের কল্যাণে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে এগিয়ে গিয়েছেন এবং সফলকাম হয়েছিলেন। চরিত্র গঠন ও সফলতা লাভের জন্য সকলের উচিত একমাত্র রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুসরন করা। বিশ্বনবি (সা.) এর আদর্শে জীবন গঠনেই শান্তি এবং মুক্তি। মানুষের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কর্মময় জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের প্রাসঙ্গিক ও ব্যবহারিক সুন্নত বা কর্মনীতিগুলো মুসলমান তথা গোটা মানবজাতির জন্য সুন্দর, সুশৃংখল ও রুচিশীল জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একমাত্র অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয় পাথেয়। নবীর সুন্নত তথা তাঁর আদর্শ যথাযথ অনুসরণ ও অনুকরণ না করে আধুনিকতার নামে মানবতাবিধ্বংসী বিচ্ছিন্ন অপসংস্কৃতি যে আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে,
‘তোমাদের জন্য রাসূল (সা.)এর জীবনেই
রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। ‘বর্তমান ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এ পৃথিবীতে রাসূল (সা.)এর আদর্শের বড়ই প্রয়োজন। মানুষে মানুষে চলমান হিংসা-বিদ্বেষ, সঙ্ঘাত দূর করতে রাসূল (সা.) এর আদর্শের কোনো বিকল্প নেই।
নৈতিক চরিত্র গঠনে রাসূল (সা.) এর অনুসরণ করতে পারলে জীবন হয়ে উঠবে সুন্দর, সুশৃংখল। যে জীবন ইহ ও পরকালে মুক্তি আনবে। বর্তমান সময়ে এই নৈতিক চরিত্র গঠনই এক কঠিন কাজ। বিশেষ করে তরুণ ও যুবসমাজ বিপথে পা বাড়িয়ে নিজেদের ধ্বংসের পথে নিয়েই চলেছে ক্রমঃশ, যা অভিভাবক ও সবার কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে তারা সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। যুবকদের চরিত্র গঠনে প্রিয় নবী (সা.) এর আদর্শই একমাত্র অনুসরণযোগ্য। যে আদর্শ একজন যুবককে গড়ে তুলবে সৎ ও চরিত্রবান মানুষ হিসেবে। এ ব্যাপারে অভিভাবক ও সচেতন সব মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। একমাত্র রাসূল (সা.) এর আদর্শই পারে একজন মানুষকে সব ধরনের খারাপ ও অনৈতিক কাজ থেকে ফিরিয়ে এনে খাঁটি ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে।
বর্তমান বিশ্বে নানা স্থানে ঘটে চলেছে যুদ্ধবিগ্রহ ও সংঘাত। সংঘাতময় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে রাসূল (সা.) এর আদর্শের দিকে ফিরে যেতে হবে। দেশ-বিদেশের সঙ্কটপূর্ণ স্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রিয় নবী (সা.) এর দিকনির্দেশনা কাজে লাগাতে পারলে সুফল বয়ে আনবে। সৌহার্দ্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠা স্থায়ী হবে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসূল (সা.) এর আদর্শই আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তাতেই বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণ নিহিত।
মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে পূর্ণাঙ্গ শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাসূল (সা.) কেই অনুসরণ করতে হবে। কারণ রাসূল (সা.) এর আদর্শ ছাড়া অন্য কোনো আদর্শ মানুষকে মুক্তি দিতে সক্ষম নয়। জীবনের প্রতিটি দিকের কার্যকর সমাধান রয়েছে শুধু প্রিয় নবী (সা.) এর জীবনেই। তিনি একমাত্র পূর্ণাঙ্গ মহামানব। রাসূল (সা.) এমন একজন মহামানব, যাঁর কোনো গোপন আদর্শ বা চরিত্র বলতে কিছু নেই। তাঁর জীবন চলার পথের প্রতিটি পদক্ষেপ বিশ্ববাসীর সামনে উন্মুক্ত। যেন মানুষকে তার জীবনের কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য অন্য কোনো আদর্শের দিকে ঝুঁকতে না হয়। পৃথিবীর অন্য কোনো মানুষের এমন উন্মুক্ত চরিত্র নেই।যে কারণে তিনিই একমাত্র ব্যতিক্রমী মহামানব। ফলে একমাত্র তাঁর সুন্নত বা আদর্শই সবার জন্য অনুকরণযোগ্য। তাঁকে অনুসরণ করতে পারলেই মিলবে স্থায়ী শান্তি ও মুক্তি। দুনিয়ার জীবন যেমন সুন্দর হবে, তেমনি পরকালীন জীবনও হবে শান্তিময়। রাসূল (সা.) কে অনুসরণ না করে শুধু লোক দেখানো ভালোবাসায় কোনো সার্থকতা ও সফলতা নেই।
রাসুলে করিম (সা.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে সবার জন্য অনুসরণীয় ও মুক্তির কান্ডারী হিসেবে। আল্লাহর ভালবাসা প্রাপ্তি মহানবীর পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হে রাসুল! আপনি লোকদের বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালবাসবেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)। রাসুলকে ভালোবাসার নিদর্শন হচ্ছে তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা। তাঁর সুন্নত অনুযায়ী জীবন যাপন না করে নিজেকে আশেকে রাসুল বলে দাবি করা অর্থহীন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সব লোকই জান্নাতি হবে অস্বীকারকারী ছাড়া। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! অস্বীকারকারী কে? রাসুল (সা.) বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানি করবে, সেই অস্বীকারকারী।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮৫১)। যুব সমাজ, তরুণ সমাজসহ আমাদের সকলের জীবন গড়ে উঠুক বিশ্বনবি (সা.) এর আদর্শে। তাঁকে যেমন ভালোবাসতে হবে, তেমনি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর অনুসরণ অপরিহার্য। তাই পরিবার ও সমাজকে সুন্দর, সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রিয় নবী, বিশ্বনবী (সা.) কে আদর্শ হিসেবে মেনে নিতে হবে। তাঁকে অনুসরণ করতে হবে জীবন চলার প্রতি পদক্ষেপে। এর কোনো বিকল্প নেই। তবেই পরিপূর্ণ শান্তি ও মুক্তির সুবাতাস বইবে ধরণীতে।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট