মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞ অনুসরণীয়

1

অর্থনীতিবিদ ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি’র প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেছেন, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রপথিক, উপমহাদেশে মুসলিম সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, সাহিত্যিক, শিক্ষা সম্প্রসারণের অন্যতম অগ্রদূত, অবিভক্ত ভারতের খ্যাতিমান মনিষী মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী’র জীবনাদর্শ ও বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞ অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আজীবন জনহিতকর, জাতীয় উন্নতিমূলক বহুমাত্রিক কর্মযজ্ঞে নিবেদিত ছিলেন। বিপ্লবী এই কীর্তিমান বাংলার মুসলিম সমাজের জাগরণে অনবদ্য ভ‚মিকা রেখেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা’র উদ্যোগে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী’র ৭৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতিমখানা পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি লায়ন সৈয়দ মোরশেদ হোসেন এতে সভাপতিত্ব বরেন।
স্মরণসভায় অংশ নেয়া বক্তারা বলেন, প্রাদেশিক সংসদে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী বাংলায় বক্তৃতা ও বিতর্ক সম্পাদন করতেন। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে এটি উদ্দীপকের ভ‚মিকা পালন করে। তিনি তৎকালীন পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে কুপ্রথামুক্ত ও সময়োপযোগী করে শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগামী করে তুলতে অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানের পাশাপাশি মাদ্রাসা এবং এতিমখানাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনক ছিলেন তিনি। বাল্যবিবাহ ও নারী-নির্যাতন রোধ, সমাজের কু-সংস্কার নিরসন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে আজীবন উদগ্রীব ছিলেন এই মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের সমাজনীতি, অর্থনীতি, ভ‚গোল, ইতিহাস এবং আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞানে যুগোত্তীর্ণ শিক্ষার উপর কাজ করে গেছেন। তিনি এই অঞ্চলে জাতীয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা ও সংলগ্ন শিক্ষা কমপ্লেক্স তাঁর অন্যতম আবিষ্কার। তিনি বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গভঙ্গ রদ ও খিলাফত আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সময় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন ও কৃষক প্রজা আন্দোলনের পরিচালক ছিলেন। প্রখ্যাত আলেম হওয়া সত্বেও তিনি ধর্মান্ধ ছিলেন না বরং যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনষ্ক ও সমাজনিবিষ্ট জনসেবক ছিলেন। একটি শিক্ষিত, জ্ঞাননির্ভর ও উদারপন্থী জাতি প্রতিষ্ঠায় তাঁর সারাজীবনের ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে অনুসরণীয় হয়ে আছে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি’র প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান। সদ্যপ্রয়াত ভাষাবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামানকে উৎসর্গ করে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিক্ষা প্রসার ও সমাজ উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য পূর্ব বাংলার প্রথম মুসলিম চিকিৎসক ডা. এমএ হাসেমকে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
কদম মোবারক এতিমখানা ও মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদের মঈনুল ইসলাম ও মো কায়ছার হামিদ’র সঞ্চালনায় সভায় অতিথি আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজ’র অধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. শামসুদ্দিন শিশির, ইসলামাবাদীর দৌহিত্র এএমএস ইসলামাবাদী গাজী, অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, আলাউদ্দিন আলী নূর, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি খান, ইতিহাস গবেষক সোহেল মো. ফখরুদ্দীন, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা’র তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেম, মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, মোতোয়াল্লি আজাদ উল্লাহ খান, কদম মোবারক এমওয়াই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জহুর, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিষদের আহব্বায়ক মো. ইলিয়াছ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াছ, অর্থ সম্পাদক আবদুল আলিম, মো. নবাব মিয়া, মো. আরিফ, হাফেজ মিজানুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বাদে ফজর খতমে কোরআন, মিলাদ মাহ্ফিল, মুনাজাত, কবর জিয়ারত ও বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠান এর পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ, হিফজ সমাপ্তকারীদের পাগড়ি প্রদান, আলোচনা সভা ও তাবারুক বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি