মধ্যরাতেই বন্ধ হতে পারে ট্রেন চলাচল

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের পেনশন, আনুতোষিক ও মাইলেজ জটিলতা কাটেনি। জটিলতা নিরসনে আজ রেল ভবনে রানিং স্টাফদের সাথে বৈঠকে বসবেন রেল সচিব। বৈঠকে দাবি মানা না হলে আজ মধ্যরাত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধের যে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল সেটি থেকে সরবে না রানিং স্টাফরা। যে কারনে আজ রাত ১২টা ১মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে রানিং স্টাফদের আংশিক দাবি মেনে অর্থ মন্ত্রনালয় যে মতামত দিয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নয় রেলের রানিং স্টাফরা।
গত ২৩ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ বৈষম্য নিরসন ও নিয়োগপত্রের ১২ এর (ক) ও (খ) শর্ত বাতিলের বিষয়ে মতামত দিয়েছে। এতে বলা হয়, রানিং স্টাফ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভ্রমণভাতা বা দৈনিক ভাতার পরিবর্তে রেলওয়ে কোডের বিধান অনুযায়ী রানিং এলাউন্স প্রাপ্য হবেন। চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের জন্য রানিং এলাউন্স ছাড়া অন্যকোন ভাতা প্রাপ্য হবেন না এবং মাসিক রানিং এলাউন্সের পরিমাণ প্রাপ্য মূলবেতনের চেয়ে বেশি হবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের আহব্বায়ক মো. মজিবুর রহমান ভুঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের দাবি মানা হয়নি। মাইলেজ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ১২নং শর্তের আংশিক দাবি মানলেও তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা আমাদের দাবিতে অটল আছি। ঢাকায় কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। দাবির বিষয়ে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি। রেলভবনের বৈঠকে দাবি মানা না হলে আগের কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে কর্মবিরতি শুরু হবে। কর্মবিরতি চলাকালে সোমবার বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হবে।
রানিং স্টাফরা জানান, রানিং কর্মচারীদের রানিং এলাউন্স যা মূল বেতনের অংশ, তা যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান ১৬০ বছরেরও বেশি সময় যাবত চলমান। অথচ গত সরকারের আমলে নিজেদের দুর্নীতি ও অর্থ অপচয় ঢাকতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এক পত্রে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের রানিং এলাউন্স কিছু ক্ষেত্রে রহিত ও কিছু ক্ষেত্রে খর্ব করে। যা রেলের কোড ও বিধি বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।
রানিং স্টাফদের আন্দোলনের মুখে ২০২২ সালের ২৪জানুয়ারি রেলওয়ে সংস্থাপন কোডের বিধান অনুযায়ী রানিং এলাউন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু রানিং এলাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানে অসম্মতি জ্ঞাপন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল আবারও অনাপত্তি দিলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে আন্দোলনে নামে রানিং স্টাফরা। পরবর্তীতে আদেশ প্রত্যাহার করে রানিং এলাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান করার কথা থাকলেও আগের অসম্মতি প্রত্যাহার হয়নি মর্মে জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। লিখিতভাবে কোন পত্র জারি না করায় রানিং স্টাফরা হতাশায় ভুগছেন। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর ও ৯ ডিসেম্বর দুই দফা সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রæতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। যে কারণে পুনরায় আন্দোলনে নামে রানিং স্টাফরা।
গত ১২ জানুয়ারি রেল স্টেশনের বিক্ষোভ ও পরদিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে তারা। এসময় রানিং স্টাফরা আগামী ২৭ জানুয়ারির মধ্যে পার্ট অফ পে রানিং এলাউন্স এবং রানিং এলাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানে অর্থ মন্ত্রনালয় কর্তৃক সকল অসম্মতি প্রত্যাহার এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত রানিং স্টাফদের নিয়োগপ্রাপ্ত রানিং স্টাফদের নিয়োগপত্রের বৈষম্যমূলক ১২ ও ১৩নং শর্ত বাতিল করে আদেশ জারি করার দাবি জানায়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে রানিং স্টাফরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাচ্ছেন না, যা ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি করছে। এ কারণে অনেক রানিং স্টাফ চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। দুই হাজার ২৩৫ জন রানিং স্টাফ পদ থাকলেও বর্তমানে এক হাজার ১৩৫ জন কাজ করছেন। এর আগেও মাইলেজের দাবিতে রানিং স্টাফরা আংশিক কর্মবিরতি পালন করেন। এতে ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় ঘটে এবং যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। চলতি ডিসেম্বর মাসেও রানিং স্টাফদের কর্মসূচির কারণে বেশ কয়েকটি মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। এবারও কর্মবিরতি শুরু হলে রেল শিডিউল বিপর্যস্ত হবে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।