পূর্বদেশ ডেস্ক
গত দুই সপ্তাহে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে মধ্যপ্রাচ্যে। এই সময়ে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। আর শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কাছে হিজবুল্লাহর ভ‚গর্ভস্থ সদর দফতরে বিমান হামলায় তাদের দীর্ঘমেয়াদি নেতা নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছে তারা। এই ১৩ দিনের চিত্র তুলে ধরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
১৭-১৮ সেপ্টেম্বর : লেবাননজুড়ে হিজবুল্লাহ সদস্যদের পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যার ফলে অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়। আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। এই হামলার জন্য ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে দায়ী করা হয়েছে। অতীতে এ ধরনের হামলার ইতিহাস রয়েছে মোসাদের।
২০ সেপ্টেম্বর : লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুল্লাহর একটি ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ৫৫ জন নিহত হয়, যার মধ্যে হিজবুল্লাহর এক শীর্ষ কমান্ডারও ছিলেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
২৩ সেপ্টেম্বর : লেবাননে ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, লেবাননজুড়ে হিজবুল্লাহর ১৩০০ স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করে এসব হামলা চালানো হয়। এতে একদিনে ৫৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। দিনটিকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
২৫-২৬ সেপ্টেম্বর : লেবাননে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই কিছু পাল্টা হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানোর আহŸান জানান বিশ্বনেতারা। বিশেষ করে ইসরায়েলের মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১২ দেশের জোট গঠন করে। সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহবান জানায় এই জোট। কিন্তু ইসরায়েল এই আহবান প্রত্যাখ্যান করে। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় মৃত্যুর সংখ্যা ৬৩০ ছাড়িয়ে যায়।
২৭ সেপ্টেম্বর : জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহকে ‘পরাজিত’ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার আগে, বৈরুতে হিজবুল্লাহ সদর দফতরে হামলার নির্দেশ দেন তিনি। তার ওই নির্দেশের পর হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর : শনিবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ দাবি করে নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পর হিজবুল্লাহও তার নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে। প্রায় ৩০ বছর ধরে সংগঠনটির নেতা হিসেবে থাকা নাসরুল্লাহকে হত্যার ঘটনা লেবাননে হিজবুল্লাহর সমর্থক এবং এর প্রধান সমর্থক ও আঞ্চলিক শক্তি ইরানের জন্য একটি বিশাল আঘাত হিসেবে মনে করা হয়।
নাসরুল্লাহ হত্যাকান্ডের পর মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে কি বৃহত্তর যুদ্ধে রূপান্তরিত হতে পারে? লেবাননে বসবাসরত সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতি এখন কেমন? এ বিষয়গুলো অবশ্য হিজবুল্লাহ, ইসরায়েল এবং ইরান কী পদক্ষেপ নেয় তার ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।