জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিতে চায় বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিষয়টা এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এটা একদিনের নোটিসে করা সম্ভব না।
বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া ২০২৪ সালের শেষ দিন মঙ্গলবার ‘মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি’ ঘোষণা করে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। শহীদ মিনারের ওই কর্মসূচি থেকেই ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কথা ছিল। সেই প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহŸান জানানো হয়েছিল। খবর বিডিনিউজের।
বলা হয়েছিল, এই ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ হবে ‘আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র’। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে এর মাধ্যমে ‘নাৎসি বাহিনীর’ মত ‘অপ্রাষঙ্গিক’ ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে ১৯৭২ সালের ‘মুজিববাদী’ সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।
ঐকমত্য গঠনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের কাছেও পাঠানো হয় ঘোষণাপত্রের খসড়া। সেখানে বলা হয়, আমরা নিজেদের স্বাধীন সার্বভৌম জনগণ হিসেবে ঘোষণা করলাম।
ওই কর্মসূচি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কর্মসূচির আগের সন্ধ্যায় ৩০ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এরপর ওই দিন গভীর রাতে জরুরি বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা দেয়, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, তারা তাতেই সমর্থন দেবে।
এরপর ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ দিন সময় ঠিক করে দেন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গত ৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেহেতু সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাই ১৫ জানুয়ারির পর কিছু সময় বাড়তে পারে। তবে খুব বেশি দেরি হবে না।
তিনি সেদিন বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে ৩১ ডিসেম্বর থেকেই অনেক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী সপ্তাহ থেকেই বসা শুরু করব।
গতকাল বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সাহেবের কাছ থেকে ঘোষণার খসড়া পেয়েছি এবং উনি অনুরোধ করেছেন যে, এই বিষয়ে আমাদের মতামত জানানোর জন্য। আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছি, আমরা আরও আলোচনা করছি। আমাদের অন্যান্য দলগুলো আছে, তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে। শুধু তাই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে কারণ এই ঘোষণাপত্রের মধ্যে সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, যেটি আমাদের দেখতে হয়।
ফখরুল বলেন, সুতরাং আমাদের ওই সময়টুকু লাগবে আর কি, আমরা চেষ্টা করছি, আলোচনা করছি এটার ওপরে।