মুহাম্মদ আয়াজ, কর্ণফুলী
কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারটেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্শার টোকেন বাণিজ্য নিয়ে পাওয়া গেছে নতুন তথ্য। টোকেন বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে পাল্টানো হয়েছে কৌশল। এখন টোকেনের আদলে বাংলাদেশ সিএনজি অটোরিক্শা হালকা যান শ্রমিক ফেডারেশন ও ট্রেড ইউনিয়নসহ একাধিক শ্রমিক সংগঠনের আইডি কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। আর তা দিয়েই অবাধে চলছে অবৈধ টোকেন বাণিজ্য। চক্রের হোতারা ট্রাফিক পুলিশকে এসব আইডি কার্ড বা টোকেন দেখিয়ে ডকুমেন্টসবিহীন অবৈধ গাড়ি ছাড়তে বাধ্য করছেন বলে জানা গেছে।
সিএনজি চালক ও স্থানীয়রা জানান, একদিকে বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত সিএনজি অটোরিক্শা চলাচলের কারণে বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি। অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের আইডি কার্ডকে টোকেন হিসেবে ব্যবহার করে প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, আবার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সিএনজি চালকরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মইজ্জ্যারটেক চত্বর ও আনোয়ারার চাতুরী চৌমুহনী এলাকায় সিএনজি অটোরিক্শা নিয়ন্ত্রণের নামে সংঘবদ্ধ চক্র ডকুমেন্টস বিহীন সিএনজি চালকদের দিচ্ছে আইডি কার্ড। মাসিক টোকেন হিসেবে এই কার্ড দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ট্রাফিক পুলিশ ডকুমেন্টস বিহীন গাড়ি আটক করলে ওই আইডি কার্ড দেখিয়ে এবং হুমকি দিয়ে অবৈধ গাড়ি ছেড়ে দিতেও বাধ্য করছে।
চক্রটি মূলত রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং কিছু ভূঁইফোড় শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং অসাধু ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের যোগসাজশে এই টোকেন বাণিজ্য চালাচ্ছে। মাস শেষে টোকেন বাণিজ্য থেকে তোলা চাঁদার টাকা বন্টন হয় চক্রটির কর্মী থেকে উপর মহলের নেতাদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মইজ্জ্যারটেক এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিকের এক কর্মকর্তা জানান, আগে ছিল কালারিং একটি টোকেন, যেখানে চলতি মাসের নাম লেখা থাকতো। এখন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে কয়েকটি ভূঁইফোড় শ্রমিক সংগঠনের আইডি কার্ড দিচ্ছে চক্রটি। আমরা যখন গাড়ি আটক করি, তখন তারা ওইসব আইডি কার্ড দেখিয়ে বলে, এটা এখানকার গাড়ি, আমি অমুক সংগঠনের সদস্য। সব শুনে পুলিশ যখন মামলা দিতে যায়, তখন চক্রটির নেতারা কল দেয় কিংবা সরাসরি এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে যায়।
অনুসন্ধানে চক্রটির কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন মো. সোলায়মান, মো. জিয়া, বাদশা, বাহাদুর রহমান ও মো. সুমনসহ আরও একাধিক ব্যক্তি চক্রটির সাথে জড়িত।
ডকুমেন্টস বিহীন অবৈধ সিএনজি চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চালকরা আগে ইংরেজি অক্ষরে মাস লেখা একটি কালারিং টোকেন পেত। বর্তমানে আইডি কার্ড দিচ্ছে চক্রটি। ওই কার্ড বা টোকেনের জন্য ডকুমেন্টস বিহীন প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্শাকে প্রতি মাসে ৫শ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।
তারা আরও জানান, গত সরকারের আমলে টোকেন বাণিজ্য প্রকাশ্যে চললেও গত বছর ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে এই বাণিজ্য কিছুদিন বন্ধ ছিল। পরে আবারও গোপনে চালাচ্ছে এই কার্ড বা টোকেন বাণিজ্য। রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে এসব চলছে। এতে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। গাড়ি ধরে পুলিশকে দিয়ে মামলা দেওয়া হয়। ফলে চালকরা কেউ চক্রটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না।
মইজ্জ্যারটেকে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের টিআই আবু সাঈদ বাকার জানান, বিষয়টি আমিও লক্ষ্য করেছি। তবে আমি সার্জেন্টসহ দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট বলে দিয়েছি, যেসব গাড়ির কাগজপত্র থাকবে না, সেসব গাড়ি কার্ড বা টোকেন দেখিয়ে যেন ছাড় না পায়। আমরা নিয়মিত ডকুমেন্টস বিহীন গাড়িগুলোকে মামলা দিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় ওইসব ভূঁইফোড় শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এসে পুলিশ সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ করে। তারপরও ডকুমেন্টস বিহীন গাড়িগুলোকে আমরা ছাড় দিব না।











