ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধি না করে খরচ কমান

1

শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর বসানো ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ সরকারের ‘অপরিণামদর্শী’ সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে রাজস্ব আয়ের অন্য উপায় খুঁজতেও সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল শনিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপে সাধারণ মানুষের ওপরে এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
ফখরুল বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা তথা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই একশর বেশি পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে এবং কিছু পণ্যের কর অব্যাহতি তুলে নিয়েছেৃসরকারের এই সিদ্ধান্তটি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলবে, চাপ বাড়াবে।
বিএনপি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগণের জীবনের ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা সাধারণ জনগণের ওপর কর এবং ভ্যাট তথা পরোক্ষ কর আরোপের মত অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার আহবান জানাচ্ছি।
নতুন করারোপের কী কী প্রভাব পড়বে তা তুলে ধরে এক সময় অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতা করে আসা বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী মহলসহ আর্থিক খাতে সংশ্লিষ্ট নানা মহলের তীব্র অসন্তোষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট প্রমাণ করে যে সরকারের মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের চরম ঘাটতি রয়েছে।
এমনিতেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এই ভঙ্গুর অবস্থায় সহজ রাস্তায় হেঁটে ভ্যাটের হার তথা কর বাড়িয়ে সরকার খরচ মেটানোর চেষ্টা করলে তা দেশের জনগণের জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা পূর্বেও বলেছি, এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাব। তাই সরকারকে অনুরোধ করছি, আপনারা নীতিমালা প্রণয়নে জনগণের কথা সর্বপ্রথম বিবেচনায় নিন।
আপনারা পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিন। কারণ পরোক্ষ কর সকল শ্রেণির মানুষকে প্রায় সমানভাবে প্রভাবিত করে এবং নিম্নবিত্ত মানুষের ওপর বোঝা বাড়ায়। প্রত্যক্ষ কর না বাড়িয়েও সরকারি খরচ কমিয়ে এবং চলতি বাজেটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা পুনর্বিন্যাস করেও চলমান আর্থিক সমস্যার সমাধান করা যায়।
ফখরুল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের সর্বপ্রথম নজর দেওয়া উচিত খরচ কমানোর দিকে। আমরা মনে করি, সরকার তার উন্নয়ন বাজেট পুনর্বিবেচনা করে অপ্রয়োজনীয় ও আর্থিকভাবে অযৌক্তিক প্রকল্পগুলো বাদ দিলে প্রায় ২০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব এবং এতে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে সহায়ক হবে।
পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার যদি স্থানীয় সরকারের বাজেট এবং ভর্তুকি খাতে খরচ কমায় এবং সার্বিকভাবে পরিচালন ব্যয় ১০ শতাংশ কমাতে পারে, তাহলে ন্যূনতম ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব। সরকার কর্তৃক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া ঋণের বাজেট কমিয়ে সাময়িকভাবে ব্যয় সাশ্রয় করতে পারে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৫০,৮৭৫ কোটি টাকা ঋণ বাজেট করা হয়েছিল।
সরকার খরচ কমানোর মাধ্যমে বাজেটের ন্যূনতম ১ লাখ কোটি টাকা সাশ্রয় এবং ঘাটতি কমাতে পারে বলেও মত দেন ফখরুল।
অপ্রয়োজনীয় ও দুর্নীতিগ্রস্ত মেগা প্রজেক্টের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ আপাতত বন্ধ রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।