সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবশেষে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। নবগঠিত কমিশন গতকাল রবিবার শপথ নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের শপথের পরপর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশন এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘আমাদের এই কমিশনের কিছু অ্যাডভান্টেজ আছে। যেটা আগের তিন কমিশনের ছিল না। এর কারণ কী জানেন, যেহেতু সরকারে কোনো দল নাই। প্রধান উপদেষ্টার কোনো এজেন্ডা নাই। চাপ নাই, এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট রিলিফ। ‘দ্বিতীয় আরেকটা বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো তো ১৫ বছর থেকে বলছে ভোটের অধিকার চাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এই যুদ্ধ করছে ১৫ বছর ধরে। তারা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমরা শুধু বলব আপনারা ১৫ বছর যে জিনিসটার জন্য আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, আমরা এই কাজটা করতে চাই। আমাদের সঙ্গে আসেন। ওরা তো আমাদের না করতে পারবে না। কেননা, এটা জাতির সঙ্গে তাদের ওয়াদা। লাস্ট ১৫ বছর ধরে তারা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান।’ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়ে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং আরো যারা জোটের মধ্যে আছে ১০/১২টা; ওটা নিয়ে তো সিরিয়াস বিতর্ক চলছে, আছে। অপেক্ষা করছি, ফয়সালাটা কী আসে দেখি; তাহলে সেইভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরাও অপেক্ষা করছি, ফয়সালাটা কী আসে দেখি। তাহলে সেইভাবেই আমরা ব্যবস্থা নেব। এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশন সকলের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘প্রত্যেক দলেরই ভোটের অধিকার থাকবে। আমাদের সংস্কার কমিশনগুলো তো কাজ করছে। তারা তো একটা সুপারিশ দেবে। তারা সুপারিশ দেওয়ার পরে বিবেচনা করে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যেটা দাঁড়ায়, সেটা হবে।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ আমলা হিসেবে অতীতে কৃতিত্বে স্বাক্ষর রেখেছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার এ কীর্তিমান এবার নির্বাচন কমিশনের গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন এমন একসময় যখন দেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর। আগামীর বাংলাদেশের সঠিক নেতৃত্ব বাছাই ও নিজের ভোটটি পছন্দের প্রার্থীকে দিতে উদগ্রিব। সিইসি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে জনগণকে আশ্বাস্থ করে আসছেন। তিনি যেহেতু স্পষ্ট করে বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন সরকারের কোন চাপে থাকবে না। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি, সাংাবিধানিকভাবে কমিশনের যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা রয়েছে তা প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে কোন বাধা থাকবে না।
অপরদিকে এ কমিশন গঠন হওয়ার পর দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দলের ক্ষীণ অসন্তোষের কথা জানা যায়। এর থেকে ধারণা করা যায়, এবার এই কমিশন গঠনকে কেন্দ্র করে বিগত বছরগুলোর মতো রাজনৈতিক বিতর্ক দেখা না গেলেও এর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েই গেছে বলে মনে করছেন অনেকে। নির্বাচন কমিশন গঠনপ্রক্রিয়ায় আগের সরকারের সময়কার মতো চর্চাই দেখা গেছে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। সে কারণে আস্থার জায়গায় একটু ঘাটতি ও প্রশ্ন থেকে গেলো বলে জানান নির্বাচন পর্যবেক্ষক জনৈক নির্বাচন পর্যবেক্ষক। তবে, রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলে গঠনপ্রক্রিয়া যেমনই হোক ভালো নির্বাচন করা সম্ভব বলে মনে করেন আরেকজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম। তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য। উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রণীত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের অধীনে গঠিত হয় এই কমিটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২২ সালে আইনটি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। আইনটি পাসের পরপরই বিরোধীদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। চলতি বছরের আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে যে কমিশন গঠন করা হয়, তারা অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইনের সংস্কারকে। তবে সার্চ কমিটি গঠিত হয়ে যাওয়ার পর এই দফায় কমিশন গঠনের জন্য নিয়োগের আইনটির সংস্কারের আর প্রয়োজন আছে কিনা বা সংস্কার সম্ভব কিনা তা নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ।
যাই হোক, নির্বাচন কমিশন গঠন হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। নির্বাচন কেন্দ্রীক অস্থিরতাও কমে আসবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, নির্বাচন আয়োজনের মূল দায়িত্বটা থাকে কমিশনের। সংবিধান অনুযায়ী সরকার তাদের সহায়তা করবে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়েজনের জন্য। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন ‘জাতিকে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়াই মূল লক্ষ্য।’ জাতি তাঁর এ কথার যথাযথ বাস্তবায়ন দেখবেন-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের। আমরা নবগঠিত এ নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাই, সেইসাথে সফলতাও কামনা করছি।