ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্থায়ী স্বস্তি ফেরাতে হবে

2

দেশের বাজার ব্যবস্থার উপর অনেক লেখালেখি হয়েছে, হচ্ছে। মূলত দেশে টেকসই কোন বাজার ব্যবস্থা নেই। স্বাধীনতার পর হতে যত সরকার বিগত হয়েছে তারা দেশের বাজার ব্যবস্থা নিয়ে কিছুই করতে পারেনি। নিয়মিত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা এদেশে খুবই দুর্বল। ভেজালপণ্য , খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানোর পাশাপাশি ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণ ইত্যাদি ক্রেতার স্বার্থ বিরোধী, অমানবিক কর্মকান্ড এদেশের বাজারে চলছে। বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনীসহ বাজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সততা, দায়বদ্ধতা, নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে পারেনি কখনো। সংশ্লিষ্টরা অসাধু ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী, ভেজালের মতো জঘন্য কাজে লিপ্তদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। বাজার ব্যবস্থা ও ব্যবসায়ীদের সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় আনা ছাড়া অবৈধ সিন্ডিকেট বহাল রেখে এবং ব্যবসায়ীদের নানা ভাবে সুযোগ প্রদান করে দেশের দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখা সম্ভব নয়। এতদবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সততা ,দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে স্থায়ীভাবে বাজার ব্যবস্থাকে সংহত করতে হবে। বিদেশ হতে পণ্য আসে, গুদামে মজুদ হয়, ব্যবসায়ীরা নানা সুযোগ সুবিধা পায় কিন্তু তারা অসাধু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ক্রেতাসাধারণকে চড়ামূল্যের মুখোমুখি করে , এমনটাই বাজারের বাস্তবতা। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানতে পারি ,আসন্ন রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে, মজুদ হচ্ছে গুদামে। মুসলমানদের পবিত্রমাস রমজানে ক্রেতাসাধারণ যৌক্তিক মূল্যে ভোগ্যপণ্য ক্রয় করতে পারবে কি না তার নিশ্চয়তা বিষয়ে আশাবাদী নয় ক্রেতাসাধারণ। আমদানি, গুদামজাত করণের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে সাধারণ মানুষের পক্ষে।
আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বেড়েছে ব্যস্ততা। ইতোমধ্যে পণ্য আমদানি শুরু হয়েছে। গুদামগুলো এখন পরিপূর্ণ। ব্যবসায়ীদের মতে, আড়তে ইতোমধ্যে রমজানি পণ্য গুদামজাত শুরু হয়েছে। এখনও অনেক পণ্য আসছে। গত কয়েকদিন খাতুনগঞ্জ ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সাধারণত রমজান শুরুর দুই-তিন মাস আগে থেকে পণ্য আমদানির সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে রাখেন। পণ্য আসার পর ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন। চলতি বছর রমজান শুরু হচ্ছে মার্চের প্রথম সপ্তাহে। সেই হিসেবে রমজানে পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে সময় আছে আর মাত্র দুই মাস।
খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে ভোগ্যপণ্যের আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে প্রচুর পরিমাণ পণ্য মজুত রয়েছে। সাধারণত রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েকগুণ। বর্তমানে বাজারে চিনির কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে ছোলা এসেছে। এছাড়া এর বাইরে রমজানে সাদা মটর ও মসুর ডালেরও চাহিদা বেড়ে যায়। ভোজ্যতেল, চিড়া এবং খেজুরের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে। তবে সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে খেজুরের শুল্ক কর কমানো হয়েছে। তাই এবার দাম সহনশীল থাকবে বলে আশা করা যায়। তাছাড়া পণ্য বুকিং থেকে শুরু করে গুদামে আসা পর্যন্ত দেড় থেকে দুইমাস সময় লাগে। অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। রমজানের বাকি আছে আর তিন মাস। এখন থেকে পণ্য গুদামজাত না করলে মার্কেট ধরা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, মটর ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অনেক পণ্য গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও দেশের অভ্যন্তরে ডলারের উচ্চমূল্যের কারণেও আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার বাজার নি¤œমুখী। তাই রমজান আসার আগে আরও কমতে পারে দাম।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা শুধু রমজান নয়, সারাবছরই বাজার মনিটরিং করে থাকি। যেখানেই অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সামনের রমজানকে ঘিরে আমরা প্ল্যান রেখেছি। অভিযানের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। তবে তার আগে আমরা ব্যবসায়ীদের সাথে বসবো। পণ্যের মজুত, দাম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করবো। তারপর অভিযানে নামবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে বাজার মনিটরিং এর জন্য কয়েকটি টিম পৃথক পৃথক জায়গায় (পাইকারী ও খুচরা বাজার) মনিটরিং করবে। বাজার মনিটরিং এর আগে প্রাথমিকভাবে সবাইকে সচেতন করা হবে। পরবর্তী সময়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মহানগরীর বাজারসমূহ মনিটরিং করা হবে এবং উপজেলায় বাজার মনিটরিং করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে নির্দেশনা প্রদান করা হবে। পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে অবশ্যই ক্রয় রশিদ সংরক্ষিত থাকতে হবে। দোকানে বা বাজারে মূল্য তালিকা টাঙাতে হবে।’
জনগণ বাজারের অস্থিতিশীল অবস্থার পরিবর্তন চায়। শুধু রমজান নয়, সারা বছর ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার,প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে সততা,দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতার সাথে কাজ করবে এমন দাবি ভোক্তাসাধারণের।