ভেনেজুয়েলার ‘লৌহমানবী’ পেলেন শান্তির নোবেল

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

বারবার দাবি জানিয়ে তীব্র আকাক্সক্ষার প্রকাশ ঘটিয়ে, সোশাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে, বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায় করেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘হাতছাড়া হয়ে গেল’ নোবেল শান্তি পুরস্কার। তিনি প্রকাশ্যেই দাবি করছিলেন, চলতি বছর এ পুরস্কারের জন্য যে তিনিই যোগ্য প্রার্থী। সংঘাতে লিপ্ত বিভিন্ন দেশের মধ্যে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ‘শান্তি স্থাপনের’ কৃতিত্ব দাবি করে নিজেকে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য দাবিদার হিসেবে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোর হাতে ওই পুরস্কার তুলে দিচ্ছে নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউট।
গতকাল শুক্রবার অসলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০৬তম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ভেনেজুয়েলার জনগণের ‘গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে’ ভূমিকার জন্য এই পুরস্কার পাচ্ছেন এই নারী রাজনীতিবিদ। খবর বিডিনিউজ’র
মাচাদোকে ভেনেজুয়েলার ‘লৌহমানবী’ হিসেবে বর্ণনা করে নোবেল শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ভাটনে ফ্রিডনেস বলেন, চরমভাবে বিভক্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি এক জায়গায় এনেছেন। লাতিন আমেরিকার জনসাধারণের কাছে সাহসের ‘অনন্য উদাহরণ’ তিনি।
টেলিগ্রাফ লিখেছে, নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী নাম ঘোষণার দুদিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নিশ্চিত করেছেন। পুরস্কার ঘোষণার আগে, অর্থাৎ একেবারে শেষ মুহূর্তে অনেকে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারে সমর্থন দিতে শুরু করে। সেইসঙ্গে মিত্ররাও ট্রাম্পকে ওই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করতে উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে ‘শান্তি চুক্তি’ ও ‘সাতটি অসমাপ্ত যুদ্ধ’ থামানোর দাবি নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যথেষ্ট হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নোবেল পুরস্কারের জন্য নিজেকে যোগ্য দাবি করেন ট্রাম্প। পূর্বসূরী বারাকা ওবামা ২০০৯ সালে, জিমি কার্টার ২০০২ সালে, উড্রো উইলসন ১৯১৯ সালে ও থিওডর রুজভেল্ট ১৯০৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান। জিমি কার্টার ছাড়া তিনজনই প্রেসিডেন্টের চেয়ারে থাকা অবস্থায় নোবেল পুরস্কার পান।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ইসরায়েল, বাহরাইন, আরব আমিরাত, মরক্কো ও সুদানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেন, যেটি পরিচিত ‘আব্রাহাম চুক্তি’ নামে। তার দাবি, তিনি সাতটি যুদ্ধ থামিয়েছেন।
সবশেষ তার মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। তবে নোবেল শান্তি কমিটি তার আগেই পুরস্কারের জন্য সম্ভবত কাউকে নির্বাচিত করে ফেলে। এই কমিটির চূড়ান্ত সভা হয়েছে সোমবার; অর্থাৎ গাজায় ট্রাম্পের শান্তি চুক্তি ঘোষণার দুদিন আগে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ নোবেল পুরস্কার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নোবেল পুরস্কার জেতার সম্ভাবনা ছিল না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছেন। নোবেল কমিটি এ বিষয়টিকে মূল্য দেয়।
অসলোর ‘পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ এর প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে আসা, সেইসঙ্গে মিত্রদের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ–এসবই নোবেলের ১৮৯৫ সালের উইলের পরিপন্থি। যদি আলফ্রেড নোবেলের উইলের দিকে তাকান, সেখানে তিনটি ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি হল শান্তি বা শান্তি চুক্তির জন্য মধ্যস্থতা, দ্বিতীয় হল নিরস্ত্রীকরণ আর তৃতীয় হল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রচার।
ইতিহাসবিদ অ্যাসলে সভিন বলেন, ট্রাম্পের নোবেল না পাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে একটি হল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার সখ্যতার চেষ্টা। স্বৈরশাসকদের প্রতি ট্রাম্পের প্রশংসাও তার নোবেল পাওয়ার শর্তের বিপক্ষে যায়। এটি আলফ্রেড নোবেলের উইলের চেতনার পরিপন্থি।
নোবেল শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেন পাঁচ সদস্যের প্যানেলের সমস্ত আলোচনায় অংশ নিলেও নোবেল পুরস্কারে কারও পক্ষে তিনি ভোট দেন না। হার্পভিকেন বলেন, “নোবেল শান্তি পুরস্কার শেষ মুহূর্তের অর্জনের জন্য নয়।”
শুক্রবার সকালে সম্প্রচারমাধ্যম এনআরকে তিনি বলেন, “২০২৪ ও তার আগের বছরগুলোতে সম্পন্ন করা কাজের জন্য এই পুরস্কার। গত কয়েক সপ্তাহ বা মাসের কাজের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয় না।”