ভুয়া হলফনামা তৈরির মামলায় দুইজন রিমান্ডে

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচারকের সিলমোহর বানানোর পর জাল স্বাক্ষর করে ভুয়া হলফনামা তৈরির অভিযোগে হওয়া মামলায় আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন ও কম্পিউটার অপারেটর সুমন দে’র দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আবু বকর সিদ্দিক এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আজহার বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তে প্রাপ্ত দুই আসামির ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
জানা গেছে, গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া হলফনামা তৈরির অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হয়। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ওই মামলায় রোজী আক্তার নামের এক নারীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে যে ভুয়া হলফনামা তৈরি করা হয়, সেটা অভিযুক্ত আসামি রোজী আক্তারের ওয়ারিশসংক্রান্ত হলফনামা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৩ মার্চ এক আইনজীবীর মোবাইল থেকে পাওয়া একটি ভুয়া হলফনামা দেখতে পান আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ। ১৩৮০/২৫ ক্রমিক নম্বরের ওই হলফনামার হলফকারী হিসেবে ছিলেন অভিযুক্ত রোজী আক্তার। তিনি হলফনামাটি আদালতের রেজিস্টার খাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। কিন্তু রেজিস্টার খাতায় ওই ক্রমিক নম্বরে ইয়ামিন রহমান নামের ভিন্ন এক ব্যক্তি নথিভুক্ত রয়েছেন বলে দেখতে পান কর্মচারীরা। রোজী আক্তার নামের হলফনামাটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কোনো একটি কাজে ইতোমধ্যে দাখিলও করা হয়েছে। এরপর নেজারত শাখার নাজির ওই ভুয়া হলফনামাটি বিচারক সরকার হাসান শাহরিয়ারকে দেখালে তিনি জানান, হলফনামার সিল ও স্বাক্ষর তার নয়। আসামি রোজী আক্তার ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের বিভিন্ন আদালতের পাঁচটি ভুয়া সিল, ৩টি ভুয়া স্বাক্ষর ও ক্রমিক নম্বর ব্যবহার করে জাল হলফনামা তৈরি করেছেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে ২২ মার্চ প্রথমে রোজী আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে পরদিন আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিটি হলফনামার জন্য প্রত্যাশী ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ৫ হাজার টাকা করে নিতেন। এ ঘটনায় নয়ন দে নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন পুলিশকে জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনীয় কাগজ পাওয়ার পর তিনি কম্পিউটার দোকানি সুমন দে’র কাছে গিয়ে ৩০০ টাকা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হলফনামা প্রিন্ট করেন।
এর আগে, অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের নামে পাঁচটি ভুয়া সিলমোহর বানিয়ে ওই বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে হলফনামাটি তৈরি করেন। হলফনামাটি তৈরি করা হয়েছিল ২৬ ফেব্রæয়ারি। পরে পুলিশ ঘটনায় জড়িত সুমন দে’কে গ্রেপ্তার করে।