আসহাব আরমান
২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতংাশ। গতবারের তুলনায় কমেছে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত বছর চট্টগ্রামের বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তবে পাসের হার কমলেও গতবারের চেয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।
গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ৩৩৯ জন। আর এবার তা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ২৬৯ জনে। তবে জিপিএ-৫ ও পাসের হারে বরাবরের মতোই মেয়েরা এগিয়ে।
অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সব বিষয়ে পরীক্ষা না হওয়ায় পাসের হার কমেছে বলেও জনিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অডিটরিয়ামে এবার এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ফল প্রকাশ অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম। ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান।
পাসের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, সব বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে পাসের হার আরও বাড়তো। কারণ একটা শিক্ষার্থী এসএসসিতে খারাপ করলেও এইচএসসিতে ভালো ফল করতে পারে। অথবা এর বিপরীতও হয় অনেক সময়। কিন্তু এবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সব বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর প্রভাব ফলাফলে পড়েছে। ফলে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ করায় জিপিএ-৫ বাড়লেও পাসের হার কমেছে।প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ২৮২টি কলেজ থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ২৯৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ জন পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৭৪ হাজার ১২৫ জন শিক্ষার্থী পাস করেছেন। যা মোট পরীক্ষার্থীর ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। মোট ১০ হাজার ২৬৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। যা গত বছরের চেয়ে ৩৯৩০ জন বেশি।
গত বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলেন ৬ হাজার ৩৩৯ জন। পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে ছাত্রীরা এগিয়ে আছেন। ছাত্র পাসের হার যেখানে ৭৬৭ দশমিক ৭২ শতাংশ সেখানে ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ৫ হাজার ৭৫৯ জন ছাত্রী যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছেন, সেখানে ছাত্রদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১০ জন। ২০২১ সালে ছেলেদের পাশের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৮৯, ২০২২ সালে ছিল ৭৭ দশমিক ৯২, ২০২৩ সালে ছিল ৭১ দশমিক ২৪ শতাংশ। কিন্তু এবার তা আরও কমে ৬৭ দশমিক ৭২ এ দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বিভাগ ভিত্তিক ফলাফলে দেখা যায়, পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর দিক থেকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে রয়েছে। চলতি বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৩ হাজার ৩৮৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এ মধ্যে ২১ হাজার ৩৬০ জন পাস করেছেন। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এই বিভাগের ৭ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন ৪৫ হাজার ৯৫৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ২৬ হাজার ২৪৪ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৩১ জন শিক্ষার্থী। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩৬ হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ২৬ হাজার ৫২১ জন শিক্ষার্থী। ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থী।
ফলাফল বিেেশ্লষণে দেখা যায়, গত ৫ বছর ধরে মেয়েদের পাসের হারও কমছে। ২০২১ সালে মেয়েদের পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৫ থাকলেও ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৮২ দশমিক ৯২, পরের বছর তা আরও কমে ৭৭ দশমিক ২৩ আর এবার হয়েছে ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ এ মেয়ের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৭৫৯ জন আর ছেলে চার হাজার ৫১০ জন।
এদিকে শহরের তুলনায় গ্রামের ফলাফল তুলানামূলক খারাপ। এবার মহানগরে পাশের হার ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ ও জেলায় ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম ২০ দশমিক ৪ শতাংশ পিছিয়ে। একই সাথে তিন পাবর্ত্য জেলা ও কক্সবাজারেও গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে।
কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। যা গতবারের চেয়ে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কম, গতকারে এই জেলায় পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
রাঙ্গামাটি জেলায় পাসের হার ৬০ দশমিক ৩২ শতাংশ। এই জেলায় গত বছর পাসের হার ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। পাসের হার কমেছে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। যা গতবারের চেয়ে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত বছর এই জেলায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৫৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। বরাবরের মত এবার তিন পার্বত্য জেলার ফল সার্বিক ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে।
সার্বিক বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম পূর্বদেশকে বলেন, ইংরেজিতে বেশি শিক্ষার্থীর ফেল করা ও পাবর্ত্য জেলাগুলোর খারাপ ফল পাসের হারে প্রভাব ফেলেছে। শহর কিংবা সমতলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পার্বত্য এলাকায় শিক্ষার্থী কম সুযোগ সুবিধা পায়। এ কারণে প্রতি বছর চট্টগ্রাম বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে এটি প্রভাব ফেলে। পার্বত্য জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে তবেই এই সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া এবারে ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায় অকৃতকার্যের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ও প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে দুর্বল থাকার কারণে বেশি অকৃতকার্য হয়েছে। যার কারণে মানবিকে পাসের হার কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলে।