ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভিডিও ফুটেজ দেখে হত্যাকান্ডে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করার পর নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, আদালতে সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১৪ জনকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় শনাক্ত করা হয়েছে। বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের সময় আলিফ হত্যাকান্ডের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করা হয়। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে তিন জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে অভিযান চালিয়ে নতুন করে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আইনজীবী সাইফুল হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ১৪ জনের মধ্যে আটজনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। তারা হলেন, রাজিব ভট্টাচার্য্য, রুমিত দাশ, সুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ ও মনু মেথর। এর মধ্যে রাজিবকে গত বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আইনজীবী আলিফ হত্যাকান্ডের ভিডিও এবং স্থিরচিত্রে সেখানে রাজিবের উপস্থিতি দেখা গেছে। ওই ছবিতে দেশি অস্ত্র এবং বটি হাতে কয়েকজন যুবকের পেছনে একটি ইটের টুকরো হাতে দেখা যায় তাকে।
নগর পুলিশের উপ কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আইনজীবী খুনের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িত এমন কয়েকজনকে আমরা এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করেছি।
এদিকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ছয়শ’ থেকে সাতশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত ভবনের মূল প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হলের সামনের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও তিনশ’ থেকে চারশ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর কোতোয়ালীর মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।
সিএমপির কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত সংগঠক ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকার পর একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে পুলিশের ১০ সদস্যসহ অন্তত ৩৭ জন আহত হন। এ ঘটনার পর থেকে জেলা আইনজীবী সমিতি দুদিনের কর্মবিরতি পালন করেছে। পাশাপাশি আইনজীবী সাইফুলের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন পক্ষের সমাবেশ-মিছিল অব্যাহত রয়েছে।