ভিড় এড়িয়ে অনলাইনেও কেনাকাটা বাড়ছে

1

এম এ হোসাইন

একসময় চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজার, টেরিবাজার বা আগ্রাবাদে গিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে হতো, কিন্তু এখন তা বদলে গেছে। সময়ের সঙ্গে মানুষের কেনাকাটা করার পদ্ধতিতে এসেছে বড় পরিবর্তন। এখন অনেকেই ঘরে বসেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পছন্দের পণ্য অর্ডার করছেন। বিশেষ করে ঈদের সময়ে, যখন সড়কগুলোতে তীব্র যানজট থাকে, তখন অনলাইন কেনাকাটা একটি বড় সুবিধা হিসেবে উঠে আসে। আবার অনেকই ভীর এড়াতে ঘরে বসেই অনলাইনে নিজের পছন্দের পণ্যটি কিনছেন অনায়াসেই। অনলাইনে লাইভ দেখে যেমন পছন্দের পণ্যটি কেনা যাচ্ছে, আবার কেনার পর পছন্দ না হলে ফেরত দেয়ার সুযোগও থাকছে। ফলে ঝামেলা এড়াতে অনলাইনে কেনাকাটার আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষদের মাঝে।
চট্টগ্রামের ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে অনলাইনে কেনাকাটার প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত করোনা পরবর্তী সময়ে যেখানে অনেকেই বাজারে গিয়ে কেনাকাটা থেকে বিরত ছিলেন, এরপর অনেকেই শপিং করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে চলে আসছেন।
খুলশীতে থাকেন ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান। তিনি বলেন, অফিস শেষে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করা খুবই কষ্টকর। তাই এবার পুরো পরিবারের কেনাকাটা অনলাইনেই করছি। এতে সময় যেমন বাঁচে, তেমনি ঈদের ভিড়ও এড়িয়ে চলতে পারি।
চট্টগ্রামের বড় শহরগুলোর মতো যানজটও এখানকার একটি বড় সমস্যা। বিশেষত নিউ মার্কেট, টেরিবাজার, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, হালিশহর এলাকায় কেনাকাটা করতে গেলে দীর্ঘ সময় রাস্তায় আটকে থাকতে হয়। এই কারণে চট্টগ্রামের অনেকেই এখন অনলাইনে কেনাকাটা করতে বেশি আগ্রহী।
ইকমার্স প্ল্যাটফর্ম বিপনন বিডি ডটকমের কর্ণধার সাহাব উদ্দিন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা একটু ধীরগতি থাকলেও, ২০ রোজার পর ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়বে আশা করছি। পোশাক ও কসমেটিকসের চাহিদা বেশি। অর্গানিক পণ্যের চাহিদাও ইদানিং বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ঈদের কেনাকাটায় আকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে।
ই-কমার্স উদ্যোক্তা রবিন আহমেদ বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে অনলাইন কেনাকাটার প্রতি মানুষের আস্থা কিছুটা কমলেও, এখন আবার তা ফিরে আসছে। ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধার কারণে মানুষ নিরাপদ বোধ করছে। এই সুবিধা চট্টগ্রামের মতো শহরে যানজট এড়াতে সাহায্য করছে। অনলাইন কেনাকাটা করতে গেলে এখন পুরো প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে গেছে- লাইভ দেখে পণ্য নির্বাচন করা, ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে অর্ডার দেওয়া এবং পণ্য বাড়ি পৌঁছানোর পর রিটার্নের সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে। এই সব কিছু মানুষের জন্য নিরাপদ ও সুবিধাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনলাইন ক্রেতা ফারহানা ইসলাম বলেন, আগে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করলে অনেক সময় নষ্ট হতো, কিন্তু এখন আমি অনলাইনে অর্ডার দিলে দুই-তিন দিনের মধ্যে পণ্য হাতে পাচ্ছি। যদি পছন্দ না হয়, তবে রিটার্নের সুবিধাও আছে। ক্যাশ অন ডেলিভারি থেকে শুরু করে অর্ডারের পদ্ধতিও অনেক সহজ হয়েছে, এবং এখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লাইভ দেখানোর সুযোগও রয়েছে যা পণ্যের বৈশিষ্ট্য এবং মান নিয়ে আরো নিশ্চিত হতে সাহায্য করে।
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ২০২১ সালে ই-কমার্স বাজার ছিল প্রায় ৫৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, ২০২২ সালে এটি ৬৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়, যদিও পরে কিছুটা নিম্নমুখী হয়। তবে বর্তমানে বাজার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার হলেও, ২০২৬ সালের মধ্যে তা ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী কাউছার আহমেদ বলেন, আমরা চাই অনলাইন ব্যবসা আরও প্রসারিত হোক। বিশেষ করে যারা শহরতলী বা মফস্বল এলাকায় থাকেন, তাদের জন্য এটি বড় সুযোগ। যদি ডিজিটাল ই-কমার্স নীতিমালা কার্যকরভাবে প্রয়োগ হয়, তবে অনলাইনে কেনাকাটার হার আরও বাড়বে। যত দ্রুত ডেলিভারি এবং পণ্য রিটার্নের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, ততই ক্রেতাদের আস্থা বাড়বে এবং বাজার আরও প্রসারিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনলাইন মার্কেটপ্লেসের উন্নয়ন ঘটাতে হলে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে প্রয়োজন স্বচ্ছ ব্যবসায়িক নীতি এবং কার্যকরী রিটার্ন পলিসি। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে অনলাইনে কেনাকাটার হার ক্রমেই বাড়ছে, আর একদিন হয়তো এটি সাধারণ কেনাকাটার বিকল্প হিসেবে স্থায়ী হবে।
চট্টগ্রামের ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের মতে, শহরের সব এলাকায় দ্রুত পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা এবং গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় থাকা নতুন নতুন পণ্য নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে অনলাইন কেনাকাটা আরও জনপ্রিয় হতে পারে।