ভারী বৃষ্টিপাতে এবারও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

10

এম এ হোসাইন

নগরের জামালখান এলাকার রহমতগঞ্জ সড়কে পানি জমে আছে দিনের পর দিন। জেএমসেন হল থেকে বাংলা কলেজ পর্যন্ত পানি জমে আছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত পথচারী চলাচল করলেও এখন পানির কারণে তাদের যানবাহনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পাশের খালে চলমান উন্নয়ন কাজের কারণে সেখানে অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছে। সেই বাঁধের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে সড়কে উঠে আসছে পানি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই সড়কে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। খালে পানি যাওয়ার পথ না থাকায় তা উল্টো ছুটে আসে সড়কে। মুহূর্তেই হাঁটুপানিতে পরিণত হয় সড়কটি। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, দোকানপাটে ঢুকে পড়ে পানি, পথচারীরা জুতা হাতে কাপড় গুটিয়ে চলতে বাধ্য হন।
এই পরিস্থিতি শুধু রহমতগঞ্জে নয়, নগরের আরও বহু এলাকায় একই চিত্র। খাল উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে প্রায় প্রতিটি খালের মধ্যেই এখন অস্থায়ী বাঁধ। ফলে পানি নামতে পারছে না। বৃষ্টির পানিও সহজে নিষ্কাশিত হচ্ছে না। যার ফলে জলজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিপাত হলে আবার জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রহমতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আজম খান বলেন, একমাসের বেশি সময় ধরে রাস্তায় পানি উঠছে। কখনো কখনো সেটা হাঁটুসমান হয়ে যায়। এমন তো হয়েই চলেছে। এখন একটু বৃষ্টি হতেই দোকানপাটেও পানি ঢুকে গেছে। খালের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এমনই কষ্টে থাকব মনে হয়।
খালের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে প্রকল্পে কাজ করছিল সেনাবাহিনী। এসব বাঁধ অনেক সময় জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এমনকি কোনো কোনো খালের বিভিন্ন পয়েন্টে একাধিক বাঁধ দেয়া হয়েছে। এপ্রিল পর্যন্ত কাজ করার টার্গেটে থাকা সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে কিছু খালের কাজ শেষ করেছে। খালের যে অংশের কাজ শেষ হয়েছে সেখান থেকে বাঁধও তুলে নেয়া হয়েছে। তবে যেখানে এখনো কাজ শেষ হয়নি সেখানে থেকে গেছে বাঁধ। এসব বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে দ্রুত পানি ফুলে উঠছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সিডিএ’র বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পে খাল খনন ও সংস্কার চলছে। প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাঁধ তুলে ফেলা হবে। ইতোমধ্যে যেসব খালের কাজ শেষ হয়েছে, সেখান থেকে বাঁধ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় এখনো বাঁধ রয়েছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক দুর্ভোগ পোহাতে হবে। অনেক খালের দুই পাশে ঘরবাড়ি থাকায় বাঁধ ছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়। বাঁধ দিয়েই খালে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, একই খালের মধ্যে একাধিক বাঁধ আছে। আমাদের টিম প্রস্তুত আছে, বৃষ্টির পানি তাৎক্ষণিকভাবে নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। যেখানে দরকার সেখানে বাঁধ কেটে দিবে। মে পর্যন্ত আমাদের সময় থাকলেও আমরা এপ্রিলেই কাজ শেষ করছি। কয়েকদিনের মধ্যে আমরা সবগুলো বাঁধ অপসারণ করতে পারবো।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতামুক্ত করণে প্রকল্প দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাস্তবায়ন শুরু হয়। তাছাড়া সিডিএ’র আরো একটি প্রকল্প। সেটি হচ্ছে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প। ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুনে শুরু হয়ে এখনো চলমান আছে।
অন্যদিকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে চসিকে আছে ‘বহদ্দারহাট বারৈপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ প্রকল্প। ২০১৪ সালে একনেকে অনুমোদন দেওয়া ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্পটির কাজও চলমান আছে। এছাড়াও নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ‘মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৯ সালে একনেকে অনুমোদন পায়।