নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলজট দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পানিতে আটকা পড়েছে মানুষ। শনিবার রাত ও গতকাল রবিবার সকালে ভারী বর্ষণে নগরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। ফলে দুর্ভোগে পড়েন কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী ও পরিবহন শ্রমিকরা। নগরের বিভিন্ন এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকায় জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। যদিও বৃষ্টি থামার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পানি নেমে যায়।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ু ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে এই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ দশমিক ২ মিলিমটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এরও আগে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮২ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং শুক্রবার ২২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই বৃষ্টি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং পাহাড়ি এলাকায় ভ‚মিধসের ঝুঁকি থাকায় স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে।
শনি ও রবিবার টানা বৃষ্টিতে নগরের কাতালগঞ্জ, জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, মনছুরাবাদ, পাঁচলাইশ, মোহাম্মদপুর, শুলকবহর এলাকায় পানি জমে যায়। চকবাজার আধুনিক চক সুপার মার্কেটের সামনের সড়ক, কাতালগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দিরসংলগ্ন সড়ক, আবাসিক এলাকা এবং ইস্পাহানি গেটে জমে থাকে হাঁটু থেকে কোমর পানি। চকবাজারের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রথম দুইদিন পানি উঠেনি। মনে করেছিলাম এবার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যার বৃষ্টি এবং আজ (রবিবার) সকালের বৃষ্টিতে কোমর সমান পানি উঠে গেছে। তবে হচ্ছে পানি দ্রæত নামছে।লালখানবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, জলাবদ্ধতার উন্নতি হবে এমনটা মনে করেছিলাম। কিন্তু সকালে ঘর থেকে বের হয়েই জলাবদ্ধতায় পড়তে হয়েছে। ওয়াসা মোড়ে হাঁটু পানি জমেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা উন্নত না হলে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে না।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে দিনের প্রথম জোয়ার শুরু হলে নগরীর নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে। ফলে জোয়ার ও বৃষ্টির যৌথ প্রভাবে জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মোহাম্মদ ঈসমাইল ভ‚ঁইয়া বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত। গত তিনদিন ধরে চট্টগ্রামে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জলজটের দেখা মিলছে অনেক জায়গায়।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্পের ভৌত কাজ পরিচালনা করছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনও খাল-নালা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বরাদ্দ স্বল্পতা ও যন্ত্রপাতি সংকটে কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
এদিকে পাহাড়ধসের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে আবহাওয়া অফিস সতর্কতা জারি করেছে। নগরীর পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে এবং খুলে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।