ভারত যেভাবে লোকজনকে ঠেলে দিচ্ছে তা ঠিক নয়

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

বাংলাদেশের নাগরিক বলে ভারত যেভাবে লোকজনকে সীমান্তের এপারে ঠেলে দিচ্ছে, তা ‘সঠিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, কেউ বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকলে প্রমাণসাপেক্ষে তাদেরকে গ্রহণ করবে ঢাকা। তবে, সেটা অবশ্যই ‘ফর্মাল চ্যানেলে’ হতে হবে। কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ একদিনে শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বলে খবর এসেছে। ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ মধ্যে আটজন বাংলাদেশি এবং অন্যরা নিজেদের রোহিঙ্গা ও ভারতের গুজরাটের বাসিন্দা বলে দাবি করছেন। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বুধবার সকালে অনুপ্রবেশের দায়ে কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ৪৪ জনকে এবং খাগড়াছড়ি থেকে ৬৬ জনকে আটক করেছে বিজিবি। অন্যদিকে, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মোট ৬৬ ভারতীয় নাগরিক।
এর মধ্যে গতকাল ভোর সাড়ে ৪টা থেকে মাটিরাঙা তাইন্দং সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন, গোমতি ইউনিয়নের শান্তিপূর সীমান্ত দিয়ে ২৭ জন ও পানছড়ির লোগাং ইউনিয়নের রূপসেন পাড়া সীমান্ত দিয়ে ২৪ জনকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করে বিজিবি।
খাগড়াছড়ির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা বলেছেন, আজ (বুধবার) ভোরে সীমান্ত দিয়ে এই ভারতীয়দের অনুপ্রবেশ করানো হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পাওয়ার পর বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।
আটকরা বাংলা ভাষাভাষী; তারা নিজেদের গুজরাটের বাসিন্দা বলে দাবি করেন। তারা বলেছেন, তাদেরকে গুজরাট থেকে বিমানে করে নিয়ে এসে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করায় বিএসএফ সদস্যরা।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, সর্বশেষ খবর পর্যন্ত ৬৬ জন ভারতীয় নাগরিককে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে। বিজিবি বিষয়টি দেখভাল করছে। আটকরা তাদের আওতায় রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সার্বক্ষণিক বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আমরা তাদেরকে দ্রæত পুশব্যাক করানোর চেষ্টা করছি।
এ অবস্থায় সরকারের অবস্থানের বিষয়ে এক প্রশ্নে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, এ খবরগুলো আমরাও পাচ্ছি। প্রতিটি কেইস আলাদা আলাদা করে নিরীক্ষণ করছি। এবং আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমরা কেবল আমাদের দেশের নাগরিক যদি কেউ থাকে এবং প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদেরকে আমরা গ্রহণ করব। এটা ফর্মাল চ্যানেলে করতে হবে। এভাবে পুশইন করাটা সঠিক নয়।
বাংলাদেশ ভারত সরকারকে জানাবে কি না, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকট এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ভারত সরকারের যোগাযোগের চেষ্টা করছি এ বিষয়ে।
ভারতের ‘পুশইন’ নিয়ে কথা বলার আগে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি পড়ে শোনান খলিলুর রহমান।
ওই বিবৃতিতে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকে শান্ত থাকার এবং সংযম দেখানোর আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
গতকাল বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত এবং পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সরকার। এ পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং উভয় দেশকে শান্ত থাকার, সংযম প্রদর্শনের এবং পরিস্থিতি ঘোলাটে করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আঞ্চলিক শান্তি, প্রগতি এবং স্থিতিশীলতার মনোভাব থেকে বাংলাদেশ আশা করছে, কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে উত্তেজনা কমে আসবে এবং এ অঞ্চলের মানুষের মঙ্গলের স্বার্থেই শান্তি বজায় থাকবে।
প্রতিবেশী দুই দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কায় সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর আহবান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।