ভারতে শীর্ষ মাওবাদী নেতা কেশব রাওসহ নিহত ২৭

2

আন্তজার্তিক ডেস্ক

ভারতের ছত্তিশগড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো অভিযানে মাওবাদী বিদ্রোহীদের শীর্ষ নেতা নাম্বালা কেশব রাও নিহত হয়েছেন।
বুধবার ছত্তিশগড়ের বস্তার ডিভিশনের নারায়ণপুর জেলার জঙ্গলে এই অভিযানে কেশব রাওয়ের ২৭ জন সঙ্গীও নিহত হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একথা জানিয়েছেন। লড়াইয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
অমিত শাহ বলেন, গত তিন দশকে এই প্রথম কোনও শীর্ষ মাওবাদী নেতাকে হত্যা করতে সক্ষম হলো নিরাপত্তা বাহিনী। প্রকৌশলী কেশব রাও ‘বাসবরাজু’সহ একাধিক নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ভারতের সন্ত্রাস-বিরোধী আইনপ্রয়োগকারী জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় তার নাম ছিল। ছত্তিশগড়ের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বিবেকানন্দ সিনহা জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন যে, নারায়ণপুর জেলায় একাধিক শীর্ষ মাওবাদী নেতা অবস্থান করছেন। এরপরই অভিযান চালানো হয় এবং সেখানে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় রাওসহ অন্যরা নিহত হন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্সে এক বার্তায় লেখেন, “এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য আমি আমাদের বাহিনীকে নিয়ে গর্বিত।”
অন্যদিকে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) এই হত্যাকাÐের নিন্দা জানিয়ে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। ভারতে ছত্তিশগড়ের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন থেকেই মাওবাদী বিদ্রোহী তৎপরতা চলে আসছে। এই বিদ্রোহীদের অভিযোগ, তারা দশকের পর দশক ধরে সরকারের অবহেলার শিকার। ভারত সরকার ২০২৬ সালের মার্চ নাগাদ মাওবাদীদের এই বিদ্রোহী তৎপারতার অবসান ঘটানোর অঙ্গীকার করেছে।
গত মাসে ভারত সরকার ‘বø্যাক ফরেস্ট’ নামে একটি বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে, যার লক্ষ্য মাওবাদী ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ শানানো।
অভিযানের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ৫৪ জন মাওবাদীকে গ্রেপ্তার করাসহ আরও ৮৪ জনকে ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অমিত শাহ।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাওবাদীদের দিক থেকে আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছিল। তারা চেয়েছিল, অভিযান বন্ধ করে সেনা প্রত্যাহার করলে তারা সংলাপে বসবে। তবে ছত্তিশগড় কর্তৃপক্ষ বলছে, সংলাপ হতে হলে তা ‘শর্তহীন’ হতে হবে।
চীনা বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত এই মাওবাদী আন্দোলনের সূচনা পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়িতে ১৯৬০-এর দশকে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে ভারতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জেলায়।
‘রেড করিডোর’ নামে পরিচিত এই অঞ্চলের বিস্তৃতি উত্তর-পূর্ব থেকে মধ্য ভারতে। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক বড় অভিযান মাওবাদীদের অনেকটা পিছু হটতে বাধ্য করলেও এখনও সংঘর্ষে প্রতি বছর বহু মানুষ নিহত হচ্ছেন।
সরকারি তথ্যানুযায়ী, গত বছর নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে ২৮৭ জন মাওবাদী, যার বেশিরভাগই ছত্তিশগড়ের। ১৯৬০-এর দশক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এই সংঘাতে মারা গেছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ।