‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ স্লোগানে মানববন্ধন

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিটি ঘরে ফিরুক ভাত খাওয়ার নিশ্চয়তা, ভাত কোনো বিলাসিতা নয়; এই আকুতিতে প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। স্লোগান ছিলো ‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’। চালের লাগামহীন ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন সমাজের নানা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, পেশাজীবী, অধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা।
এ মানববন্ধনের আয়োজন করে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), যুব ক্যাব ও আইএসডিই বাংলাদেশ। সঞ্চালনায় ছিলেন যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান।
মানববন্ধনে স্লোগানো জানানো হয় নানা প্রত্যাশা। ভাতের থালা যেন অভাবের প্রতীক না হয়, বরং হোক ন্যায্যতার ও নীতির প্রতীক। দেশের প্রতিটি ঘরে যেন নির্ভয়ে হাঁড়িতে ভাত চড়ে এমটা প্রত্যাশা ছিল মানববন্ধনের স্লোগানে। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাজারে চালের সংকট নেই, অথচ দাম বেড়েই চলেছে। এর পেছনে আছে করপোরেট সিন্ডিকেটের কারসাজি, যার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সরকার দৃশ্যত দর্শকের ভ‚মিকা পালন করছে।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চালের কোনো ঘাটতি নেই। মজুদও যথেষ্ট। এটি পুরোপুরি একটি কৃত্রিম সংকট। আমরা বহু বছর ধরে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলছি, কিন্তু সরকারের আন্তরিকতার অভাবে তাদের ভাঙা যায়নি। মূল হোতা মিলার, পাইকার, আড়তদার ও করপোরেট গ্রুপ, তাদের কেউ ধরছে না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেই দায় সারা হয়।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হওয়া উচিত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যারা এই সংকটের জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
খানি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষ। পুষ্টিকর খাবার বাদ দিয়ে তারা শুধু চাল নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে, তৈরি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী অপুষ্টি ও মানসিক চাপ।
মানববন্ধনে বক্তারা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা এবং মনিটরিংয়ের দুর্বলতারও কড়া সমালোচনা করেন। তারা বলেন, বাজারে একদিকে কৃত্রিম সংকট, অন্যদিকে ওএমএস ও টিসিবির কার্যক্রম অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মানববন্ধন থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি চাল কেনার আওতা বাড়ানো, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, টিসিবি ও ওএমএস কার্যক্রমের আওতা ও কার্যকারিতা বাড়ানো, ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চালের বাজারে নিয়মিত ও কার্যকর মনিটরিং চালু করে সিন্ডিকেট ভাঙা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান, বাংলাদেশ ফ্রæটস অ্যান্ড ভেজিটেবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহ-সভাপতি ফারহানা আখতার, বিএনপি নেত্রী ফরিদা খানম এবং ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস।