ভয়াবহ বন্যায় অনেকে নিঃস্ব মিরসরাইয়ে পোলট্রি শিল্পে

2

এম. আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মিরসরাই উপজেলায় পোলট্রি শিল্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিঃস্ব হয়ে গেছেন অনেক খামারি। টাকার অংকে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২১ আগস্ট থেকে টানা সাতদিনের বন্যায় উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলি, জোরারগঞ্জ, ধুম, ওচমানপুর, ইছাখালী, কাটাছরা, মিঠানালা, মঘাদিয়া, মায়ানী, খৈয়াছরা, ওয়াহেদপুর, হাইতকান্দি ও সাহেরখালী ইউনিয়নে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে শতাধিক খামারের প্রায় লাখ লাখ মুরগি। এছাড়া ৭০টি গরু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ২৪টি ছাগল ও আটটি মহিষ মারা গেছে। পাহাড় ধসে মারা গেছে দু’টি গরু ও তিনটি ছাগল।
উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের বাপ্পি পোলট্রি ফার্মের সত্ত¡াধিকারী জাহিদ হোসেন বাপ্পি বলেন, আমি ২০০৬ সাল থেকে পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমার মিসরাইয়ের বেচুনি পোল এলাকায় চার হাজার ব্রয়লার, ছাগলনাইয়ার আলোকদিয়ায় ৫ হাজার ব্রয়লার ও ৯ হাজার ৮০০ সোনালি এবং সমিতি বাজার এলাকায় ১০ হাজার ব্রয়লার মুরগি ছিল। বিক্রয়যোগ্য এসব মুরগি বন্যার পানিতে মারা গেছে। এতে আমার প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি সিপি কোম্পানির অনুমোদিত ডিলার। ওরা আমার কাছে ১০ লাখ টাকা পাবে। এছাড়া ব্যাংক ঋণ রয়েছে। এখন কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবো ভাবতে পারছি না। বন্যার পর থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
আরেক খামারি কেফায়েত উল্লাহ হাজারী বলেন, জীবনে কখনো এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখিনি। বন্যায় আমি শেষ হয়ে গেছি। বন্যায় আমার খামারের ১১ হাজার মুরগি মারা গেছে। এতে আমার ২৮ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবো বুঝতে পারছি না।
একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু মুরগি মারা গেছে এ ক্ষতি না। বন্যাকবলিত প্রায় সবগুলো শেড নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো মেরামত করতে অনেক টাকা লাগবে। এছাড়া শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও অতিরিক্ত মজুরি ছাড়া কেউ করছে না।
গরুর খামারি আনোয়ার ডেইরি ফার্মের সত্ত¡াধিকারী আনোয়ার বলেন, বন্যায় ৭০টি গরু মারা গেলেও আগামিতে গো খাদ্যের অভাবে অনেক গরু মারা যাবে। উপজেলায় প্রায় ১০০ টন শুকনো খড় পানিতে ভেসে গেছে। পানির নিচে ডুবে পচে গেছে ৫০ একর জমিতে চাষ করা ঘাসের জমি।
মিরসরাই উপজেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জানান, বন্যায় মিরসরাইয়ে পোলট্রি শিল্পে অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক খামারি পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত খামারগুলোতে আগামি ৩ মাস মুরগির বাচ্চা তোলা যাবে না। অনেকে বেকার হওয়ার আশঙ্কা করছি।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জাকিরুল ফরিদ জানান, বন্যায় উপজেলার শতাধিক পোলট্রি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া ৭০টি গবাদি পশু ভেসে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সামনের দিনগুলো খামারিদের জন্য আরও কঠিন হবে। আগামি ৩ মাস ক্ষতিগ্রস্ত খামারে মুরগি তোলা সম্ভব হবে না।