ভয়ংকর অপহরণ-মুক্তিপণ আদায়ে ‘বার্মা সাইফুল’ চক্র

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরে তিন ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় উদ্ধার করা হয় অপহৃত তিন ব্যক্তিকেও। গ্রেপ্তার চারজন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মা সাইফুলের অনুসারী বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পাঁচলাইশ থানার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মোড়ের শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের পেছনের বাগান থেকে শনিবার রাতে অপহৃতদের উদ্ধার করে চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার চারজন হলেন- বাছির আহম্মদ ওরফে রানা (২৭), মো. জিহাদ (২৪), মো. আরিফ (২৪) ও মো. ইমন ওরফে সাদ্দাম (২৩)। এদের মধ্যে বাছিরের বিরুদ্ধে ১০টি, ইমনের বিরুদ্ধে আটটি এবং অন্যদের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা আছে। উদ্ধার হওয়া তিনজন হলেন- সমীর দাশ (৪৫), কেশব মিত্র দাশ (৪৩) ও রুবেল রুদ্র (৪২)। কেশব মিত্র পুরহিত এবং অপর দুজন শালকর ব্যবসায়ী।
গতকাল রোববার নগর পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপ কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন জানান, নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ওই তিনজকে অপহরণ করা হয়। এরপর তাদের ওই এলাকার একটি ভবনে আটকে রেখে নয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এসময় ওই অপহৃত তিনজনকে ব্যাপক মারধর করেন অপহরণকারীরা।
রইছ উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে অভিযান চালালে অপহরণকারীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। সিএমপির ডিবি উত্তর-দক্ষিণ বিভাগের একটি টিম শনিবার সন্ধ্যায় পাঁচলাইশ থানার পলিটেকনিক মোড়ের শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের পেছনের একটি বাগান থেকে অপহৃত তিনজনকে হাত-পা বাধা অবস্থায় উদ্ধার করে। এসময় পাঁচটি মোটরসাইকেল, ১০টি কিরিচসহ চার অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপহৃতরা পরষ্পর পরিচিতি জানিয়ে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, রুবেল রুদ্রকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এবং সমীরকে বেলা আড়াইটার দিকে নিজ নিজ লন্ড্রি থেকে অপহৃত হন। অনেকেই মনে করেছিল রুবেল ও সমীরকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছেন। তাদের বিষয়ে জানতে পরিচিতরা কেশব মিত্রকে পুলিশের কাছে যেতে বলেছিলেন। কেশব বিকালে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় যাবার পথে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে অপহরণকারীরা হিলভিউ ১ নম্বর সড়ক থেকে তাকে একটি অটোরিকশা করে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে আসলেও তাদের ধরতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশকে জানানোর পর তারা অভিযানে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে পুলিশ যতটুকু জেনেছে গ্রেপ্তার হওয়ার অপহরণকারীরা সবাই বার্মা সাইফুলের অনুসারী।
বায়েজিদ এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অপরাধের ঘটনায় নাম আসে সাবেক ছাত্রদল নেতা বার্মা সাইফুলের। সা¤প্রতিক সময়ে তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ এলাকার লোকজন মানববন্ধন করেছে বলেও স্থানীয়দের ভাষ্য।
রইছ উদ্দিন বলেন, তাকে ধরার জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে। কার কী রাজনৈতিক পরিচয় সেটি আমাদের বিবেচ্য নয়। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও এ বিষয়ে বার্মা সাইফুলের বক্তব্য জানা যায়নি।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক সাইফুলকে ২০২১ সালের ১৭ জুন বায়েজিদ থানা পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছিল। ওই সময় ছাত্রদলের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল যে ‘প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে’ পুলিশ বার্মা সাইফুলকে গুলি করে।
তবে সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে পুলিশ বলেছিল বার্মা সাইফুল তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ১৮টি, তার অপর দুই ভাই সাইদুল ও সবুজের বিরুদ্ধে ১৮ ও ২১টি করে মামলা আছে। বার্মা সাইফুলকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের ভাষ্য ছিল, ঘটনার দিন রাত পৌনে ২টার দিকে বায়েজিদ লিঙ্ক রোডে দুইটি মোটরসাইকেল দ্রæত চেকপোস্ট অতিক্রম করে চলে গেলেও একটি মোটরসাইকেল রাস্তায় ফেলে দুই যুবক পাহাড়ের দিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাদের পিছু নিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। দুই পক্ষের গোলাগুলির পর পাহাড়ের ঢালে বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইফুলকে গ্রেপ্তার করার কথা তখন বলা হয়েছিল।