এম. সাইফুল্লাহ চৌধুরী, লোহাগাড়া
লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে রেললাইনের দুই পাশে সাইড ওয়ালে থাকা পকেট গেট ব্যারিয়ার নির্মাণ করে সুরক্ষিত করা হয়েছে। ফলে রেললাইনে আসতে পারবে না বন্যহাতি। তবে অন্যদিকে বন্যপ্রাণী সুরক্ষার জন্য দেয়া সাইড ওয়ালের কিছু অংশ হেলে পড়েছে। হেলে যাওয়া অংশ ভেঙে গেলে বন্যপ্রাণী চলে আসতে পারবে রেললাইনে, এতে পুনরায় দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।
জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর রাতে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এলিফ্যান্ট ওভারপাসের সাইড ওয়ালে থাকা অরক্ষিত পকেট গেট দিয়ে রেললাইনে চলে আসে বন্যহাতি। এতে ঢাকাগামী কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত ও পা ভেঙে যায় আনুমানিক ১০ বছর বয়সী হাতি শাবকের। এরপর হাতিটি নিচে গড়িয়ে পড়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে ১৫ অক্টোবর ভোরে রেলওয়ের একটি রিলিফ ট্রেন আহত বন্যহাতিটিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালে নিয়ে যায়। একইদিন বিকেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটির মৃত্যু হয়।
এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাইড ওয়ালের অরক্ষিত পকেট গেটে ব্যারিয়ার দিয়ে সুরক্ষিত করে দেয়। তবে নি¤œমানের কাজ করায় গত বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে বন্যপ্রাণী সুরক্ষার জন্য দেয়া সাইড ওয়ালের কিছু অংশ হেলে পড়ে গেছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে পড়েছে রেললাইন। এই অংশে বন্যহাতির চলাচলে যাতে সমস্যা না হয় বিষয়টি মাথায় রেখে ৩টি আন্ডারপাস ও একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ওভারপাসের নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে রেললাইনের দুই পাশে দেয়া হয়েছে সাইড ওয়াল। যাতে বন্যহাতি ওভারপাস অতিক্রম করার সময় রেললাইনে চলে না আসে। সাইড ওয়ালে রাখা হয়েছে দুই পাশে দুইটি পকেট গেট।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, অভয়ারণ্যের ভেতর নির্মিত এলিফ্যান্ট ওভারপাসের দক্ষিণ পাশে প্রায় আধা কিলোমিটার ও উত্তর পাশে প্রায় দেড় কিলোমিটার সাইড ওয়াল দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুই পাশে রয়েছে দুইটি পকেট গেট। ট্রেনের ধাক্কায় বন্যহাতির শাবক মারা যাবার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পকেট গেট দুটিতে ইতোমধ্যে ব্যারিয়ার নির্মাণ করে দিয়েছে। তবে এলিফ্যান্ট ওভারপাশের নিকটে পশ্চিম পাশে প্রায় ৫০ ফুটের মতো অংশে সাইডওয়াল হেলে পড়েছে। দেয়া হয়েছে ঠেস। হেলে পড়া অংশ ভেঙে গেলে নির্বিঘ্নে রেললাইনে চলে আসতে পারবে বন্যপ্রাণী। ফলে যে কোন সময় পুনরায় বন্যপ্রাণী হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে, গত ২৪ অক্টোবর চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতি মৃত্যুর ঘটনায় কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের লোকোমাস্টার জামাল উদ্দিনকে সামায়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের অনুরোধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অভয়ারণ্য এলাকায় বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় ট্রেনের গতি ২০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে সুপারিশমালা আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্যও বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী সানজিদা রহমান জানান, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতর ৩টি এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু করা হয়েছে ১টি। এছাড়া রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে সাইড ওয়ালের পকেট গেট অরক্ষিত থাকায় বন্যহাতি রেললাইনের উপর আসতে পেরেছে। অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষের আঘাতপ্রাপ্ত বন্যহাতির পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা দেয়ার ব্যবস্থা ছিল না। ফলে আহত হাতিকে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে বিলম্ব হওয়ায় মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নিম্নমানের কাজ করায় সাইড ওয়ালের কিছু অংশ হেলে গেছে। হেলে যাওয়া অংশ দ্রæত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে যাওয়া রেললাইনের পুরোটা অংশে দুই পাশে সাইড ওয়াল নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাসেল জানান, অভয়ারণ্যে রেলাইনের দুই পাশে সাইড ওয়ালে থাকা পকেট গেট ব্যারিয়ার নির্মাণ করে দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে। এছাড়া বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসে মাটি সাইডওয়ালের উপর পড়ায় কিছু অংশ হেলে গেছে। শীঘ্রই হেলে যাওয়া অংশ সংস্কার করা হবে।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান, সম্প্রতি ট্রেনের ধাক্কায় বন্যহাতি মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পকেট গেটে ব্যারিয়ার দিয়ে সুরক্ষিত করেছে। যার ফলে অভয়ারণ্যের ভেতর সাইডওয়াল দেয়া অংশ পর্যন্ত সীমানায় বন্যহাতি রেললাইনে আসতে পারবে না। এছাড়া দূর্ঘটনার পর থেকে অভয়ারণ্য এলাকায় ট্রেনের গতিও কমিয়ে দেয়া হয়েছে।