নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো শহরের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। স¤প্রতি একটি শিশু ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে গিয়ে খালে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এগুলো (ব্যাটারি রিকশা) দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে, রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এই বিষয়ে আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। আমি সিএমপিকে ধন্যবাদ জানাই তারা একদিনেই ১ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটক করেছে’।
গতকাল রবিবার নগরীর নিউ মার্কেট এলাকার ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নালা ও নর্দমা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং হকারদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া পরিদর্শনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, আপনারা অনুগ্রহ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোতে চড়া থেকে বিরত থাকুন। আপনারা যদি তাদের নিরুৎসাহিত করেন, তাহলেই তারা রাস্তায় নামা বন্ধ করবে। এই শহরে আর কোনো মা যেন সন্তান হারিয়ে বুক খালি না করে- আমরা সবাই মিলেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
পরিদর্শনকালে ফুটপাত দখল করে হকারদের ব্যবসা চালনার কারণে সাধারণের চলাচল ও যানজট সৃষ্টির বিষয়টি দেখতে পেয়ে মেয়র বলেন, হকাররা সকাল বেলা ফুটপাতে বসতে পারবে না। বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা বসতে পারবে। ধাপে ধাপে এটা আরও গোছানো হবে। ভবিষ্যতে আমরা এটাকে ‘ইভনিং মার্কেট’ হিসেবে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। হকার পুনর্বাসনের জন্য দু’টি নির্দিষ্ট জায়গা আমরা বিবেচনায় রেখেছি। প্রথমটি হলো জহুর হকার্স মার্কেটের জায়গায় একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণ করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকা। যেখানে বর্তমানে কিছু অপরাধী চক্র, মাদক ব্যবসায়ী ও আসক্তদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। সেখানে হকারদের বসানো যেতে পারে, যেখানে অবশ্যই রেলওয়ে রাজস্ব পাবে। আমরা চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ এবং জনসমাগম ব্যস্ত এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে টার্গেট করা হয়েছে নিউ মার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেটসহ আশেপাশের অঞ্চলগুলোকে। এখানে প্রতিনিয়ত বিপুল সংখ্যক মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন, যার ফলে যানজট লেগেই থাকে। এর আগেও আমরা চকবাজার এলাকায় রাস্তা দখল করে বাজার বসানো দোকানদারদের পুনর্বাসন করেছি এবং এলাকা দখলমুক্ত করেছি। পরবর্তী লক্ষ্য মেডিকেল কলেজ এলাকা। এখানে রোগী এবং তাদের স্বজনরা ওষুধ ও চিকিৎসাসেবার জন্য ছুটোছুটি করেন, আর ফুটপাতগুলো দখল হয়ে থাকে। আমি এই এলাকার ব্যবসায়ী ও দখলদারদের অনুরোধ করবো, আপনারা স্বেচ্ছায় সরে যান, কারণ আমরা এই এলাকাকেও শৃঙ্খলার আওতায় আনতে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে আগ্রাবাদ এলাকায় একটি পে-পার্কিং ও নাইট মার্কেট চালু করেছি। এতে যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এরকম পে মার্কেট ব্যবস্থাপনা চালু করা যেতে পারে’।
মেয়র আরো বলেন, কোনো জোর জবরদস্তি নয়, হকারদের বোঝানোর মাধ্যমেই উচ্ছেদ কার্যক্রম সফল করা সম্ভব। কাউকে মারধর করে, বারবার চাপ দিয়ে কোনো কাজ স্থায়ী হয় না। সব পক্ষকে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে নগরীর যানজট নিরাসনে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি। নগরবাসীর চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে ফুটপাত দখলমুক্ত করতেই হবে। পাশাপাশি হকারদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখেই ধাপে ধাপে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সবাই মিলে শহরটাকে একটি দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য শহরে পরিণত করতে চাই। আমি নিজেকে শুধু একজন মেয়র নয়, একজন নগরসেবক, একজন সমাজসেবক হিসেবে ভাবি। আমরা সবাই মিলে এই শহরটাকে ক্লিন, গ্রিন এবং হেলদি সিটিতে রূপান্তরিত করবো।
তিনি বলেন, ‘আমি যদি আশকারদীঘির পার্কটিকে দৃষ্টিনন্দনভাবে পুনঃউন্নয়ন করতে পারি, যদি ভেলুয়ারদিঘী, ঢেবারপাড়সহ এসব ঐতিহ্যবাহী জায়গায় ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে মানুষের সামনে নতুনভাবে তুলে ধরতে পারি, আর সিআরবি এলাকাটিকে যদি আরও সবুজ, আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলতে পারি-তাহলে মানুষ সত্যিই এই শহরে স্বস্তি পাবে’।
জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ইতোমধ্যে অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের চসিকের নিজের মার্কেট, যেটি নালার উপর ছিল, আমি তা নিজেই ভেঙে দিয়েছি। মাসে প্রায় ১২-১৪ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, তবুও জনগণের স্বার্থে আমরা সেটা করেছি। অতএব, যারা নালার উপর অবৈধ স্থাপনা করেছেন, তাদের অনুরোধ করবো- আপনারা এগুলো ভেঙে দিন। আমরা চাই শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা কার্যকর হোক, মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাক।
নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, এসময় চসিকের কর্মকর্তাবৃন্দ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।