নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে চলতি বোরো মৌসুমে ১০ হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। যা বিগত বছরের চেয়ে প্রায় এক হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন কম। তবে ধান ও সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমলেও আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। গত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া বোরো সংগ্রহ মৌসুম ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। ধান ও চাল সরবরাহে চাল কল মালিক ও কৃষকদের অনীহা থাকায় এবার প্রতিকেজিতে চার টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। ধান ও চালের দাম বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা কমানোর হলেও তা পূরণ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। অথচ কৃষি অধিদপ্তর বলছে, এবার ৬৯ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা সফল হয়েছে। সে হিসেবে আশানুরূপ ধানের ফলনও হয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন পূর্বদেশকে বলেন, ‘কৃষক ও মিল মালিকরা প্রায় সময় দাম কম পাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে। যে কারণে প্রতি কেজিতে এবার চার টাকা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে’।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে চলতি বছর ১০ হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে। গত বছর তা ছিল ১২ হাজার ৬৩১ মেট্রিক টন। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ১ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমেছে। এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৫৯ মেট্রিক টন। যা গত বছরে ছিল ৬ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি ধানের দাম ৩২ টাকার পরিবর্তে ৩৬ টাকা ধরা হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১ হাজার ৬৯৯ মেট্রিক টন।
চট্টগ্রামের পটিয়া, সীতাকুন্ড ও ফটিকছড়ি উপজেলায় সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়। গত বছর যেখানে এই তিন উপজেলায় ৬৭০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবার তা কমিয়ে ৫৯৬ মেট্রিক টনে নামানো হয়েছে। পটিয়ায় এবার সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হবে না। ফটিকছড়িতে ২৮২ মেট্রিক টন ও সীতাকুন্ডে ৩১৪ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে। এবার সিদ্ধ চালের প্রতি কেজির দাম ৪৫ টাকার পরিবর্তে ৪৯ টাকা করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের মানুষ আতপ চালের উপর নির্ভরশীল বেশি। যে কারণে আতপ চাল সংগ্রহেই বেশি জোর দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। এবার আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩৩ মেট্রিক টন। যা গত বছরে ছিল ৫ হাজার ৯০৩ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি আতপ চালের দাম ৪৪ টাকার পরিবর্তে ৪৮ টাকা করা হয়েছে।
জানা যায়, চাল সংগ্রহে এবারো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাইরে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষক ও মিল মালিকরা খাদ্য অধিদপ্তরে ধান ও চাল সরবরাহ করতে চায় না। সম্প্রতি শেষ হওয়া আমন মৌসুমেও কৃষক ও মিল মালিকদের অনীহার কারণে সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। সরকারকে ধান দিতে গেলে ধানের মান নিয়ে গুদামে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয় কৃষকরা। যে কারনে ধান সরবরাহে পিছু হটে কৃষকরা। অতীতে বোরো ও আমন মৌসুমে কয়েকজন মিল মালিক চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আবার একশ্রেণির অসাধু মিল মালিক খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে একাই বেশিরভাগ চাল সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ আছে। লোকসানের কারনে যেখানে অন্যান্য চাল মিল মালিকরা অনীহা দেখায় সেখানে খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী সুযোগটি কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে। গুদামের চাল কিনে নিয়ে সেগুলোই বস্তা পাল্টে আবারো সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেওয়ান হাট ও হালিশহর খাদ্য গুদামের দুই ব্যবস্থাপক।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, ‘চলতি বছরে ৬৯ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রীড ২২ হাজার ৮২৫ হেক্টর ও উপশী ৪৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর। এখন বোরো ধান কাটা হচ্ছে। যতটুকু জেনেছি ফলনও ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে’।